রাজনীতিক ও পেশাদারদের ব্যস্ততা বাড়বে। বয়স্করা শরীর স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিন। ধনযোগ আছে। ... বিশদ
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালে ওই নৃশংস খুনের ঘটনাটি ঘটে, ফুলবাগান থানা এলাকার রামকৃষ্ণ সমাধি রোডের একটি ফ্ল্যাটে। ঘটনার দিন দুপুরে ওই ফ্ল্যাটে বৃদ্ধা সুধা দেবী সিংহানিয়া একাই ছিলেন। তাঁর স্বামী ব্যবসার কাজে বাইরে ছিলেন। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দুষ্কৃতীরা ওই ফ্ল্যাটে ঢোকে। ভারী বস্তু দিয়ে বৃদ্ধার মাথায় আঘাত করে এবং গলায় ফাঁস লাগায়। এইভাবে তাঁকে খুন করা হয়। এরপর আলমারির লকার ভাঙে। বিভিন্ন সোনার অলঙ্কারসহ নানান দামি জিনিসপত্র নিয়ে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়। যাওয়ার সময় দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দেয়। ওই ফ্ল্যাটের কিছুটা পাশেই থাকেন বৃদ্ধার মেয়ে। দুপুরে কোনও প্রয়োজনে মেয়েটি বেশ কয়েকবার ফোন করেন মাকে। কিন্তু কোনও সাড়া পাননি। ফলে তিনি সোজা ওই ফ্লাটে চলে আসেন।
পরিচারকের নাম ধরে ডাকাডাকি করেন। পরিচারকের সাড়া মেলেনি। এরপরই দরজা ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে যায়। বৃদ্ধার মেয়ে ভেতরে ঢুকে দেখেন, তাঁর মা মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে রয়েছেন। চারপাশে রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে। এর সঙ্গে আলমারির জিনিসপত্র ঘরের চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ওই দৃশ্য দেখে তিনি চিৎকার চেঁচামেচি করেন। ছুটে আসেন ফ্লাটের লোকজন। খবর দেওয়া হয় ফুলবাগান থানায়। পুলিস গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে তা ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। যথাসময়ে খুনের মামলা দায়ের করা হয়। তদন্তভার নেয় কলকাতা গোয়েন্দা পুলিসের হোমিসাইড শাখা। তদন্তে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, ওই ফ্ল্যাটের নাবালক পরিচারককেই ‘ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করে দুষ্কৃতীরা। ওই ফ্ল্যাটে কে কখন থাকেন, আলমারিতে কী কী আছে, তার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ জানতে পারে ওই পরিচারকেরই মাধ্যমে। তাকে সোনাদানা ও টাকার লোভ দেখানো হয়। ঘটনার দিন দুপুরে সুরেশ ফ্ল্যাটের বাইরে থেকে কলিংবেল বাজায়। সঙ্গে সঙ্গে ফ্ল্যাটের দরজা খুলে দেয় পরিচারক। এরপরই সুরেশ ওই বৃদ্ধাকে খুন করে। ফ্ল্যাটের আলমারি থেকে হাতানো সোনাদানা সন্তোষের কাছে রাখতে দেওয়া হয়।
এদিকে, ঘটনার পর ওই পরিচারকের সন্ধান না মেলায় পুলিসের মনে নানা সন্দেহ দানা বাঁধে। গোয়েন্দারা নানাভাবে খোঁজখবর নিতে থাকেন। শেষমেশ বিহার থেকে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়। সন্তোষের হেফাজত থেকে পাওয়া যায় চুরি যাওয়া অধিকাংশ সোনাদানা। অভিযুক্তদের লাগাতার জেরা করে পুলিস। একসময় তারা ভেঙে পড়ে এবং অপরাধ কবুল করে।
এদিকে, তদন্ত শেষ করে পুলিস শিয়ালদহ আদালতে চার্জশিট পেশ করে। অভিযুক্ত পরিচারক নাবালক হওয়ায় মামলার নথিপত্র পাঠানো হয় জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে। আদালতে সাক্ষ্য দেন মোট ২২ জন। আদালতে বৃদ্ধার মেয়ে চুরি যাওয়া সোনাদানা শনাক্তও করেন। মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর আদালত দুই অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা ঘোষণা করেছে।