গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ ও সন্দেশখালি১ ব্লকের মোট ১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে হিঙ্গলগঞ্জ কেন্দ্র। ২০১১ সালে সিপিআই প্রার্থী আনন্দময় মণ্ডল তৃণমূল প্রার্থী দেবেশবাবুকে প্রায় হাজার খানেক ভোটে হারান। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে আনন্দময়বাবুকে প্রায় ২৩ হাজার ভোটে পরাজিত করেন দেবেশবাবু। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটেও এই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রায় ২২ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল। নদী বেষ্টিত হিঙ্গলগঞ্জে ইটভাটা ও মাছের ভেড়ি প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি। এই মেছোভেড়ি ও ইটভাটার দখলকে কেন্দ্র করে বোমা ও গুলির লড়াই দীর্ঘদিন ধরে দেখছে সুন্দরবনবাসী। ২০১১ সালে পালাবদলের আগে বাবু মাস্টার ছিলেন সিপিএমের সন্ত্রাসী নায়ক। এলাকায় ইটভাটা ও মেছেভেড়ির একচ্ছত্র কায়েম ছিল তার হাতে। কিন্তু ক্ষমতা বদলের সঙ্গে সঙ্গে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। এরপর ধীরে ধীরে আদি তৃণমূল কর্মীদের ঘরছাড়া ও দলছাড়া করে তিনিই হয়ে ওঠেন তৃণমূলের বেতাজ বাদশা। এলাকায় ভোট লুট, বন্দুক দেখিয়ে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা তাঁর কুখ্যাত ‘বাইক বাহিনীর’ কাছে জলভাত। তাঁর অত্যাচারে ক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মী ও সাধারণ মানুষের একাংশ বেশ কয়েক বছর ধরে বিজেপিগামী হয়ে অত্যাচারের শিকার হয়েছেন। কিন্তু ১৯ ডিসেম্বর বাবু মাস্টার বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর তৃণমূলের কার্যত শাপমোচন হয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের মত। কারণ, তিনি বিজেপিতে যাওয়ায় বিজেপির আদি কর্মীরা চরম ক্ষুব্ধ। তাঁদের অনেকে ক্ষোভে বাড়িতে বসে গিয়েছেন। বিজেপি প্রার্থী নিমাই দাস হিঙ্গলগঞ্জে বাবু মাস্টারের সঙ্গে একদিনও একসঙ্গে কর্মসূচি করেননি। আবার গোষ্ঠী কোন্দলে কোণঠাসা তৃণমূল কর্মীরা নতুন উদ্যমে ভোট প্রচার শুরু করেছে। ভবানীপুরের বাসিন্দা গৌতম ঋষি, স্বরূপ মণ্ডল বলেন, বাবু মাস্টারের অত্যচার সহ্য করে আমরা কোনওমতে বেঁচে আছি। দিদি এলাকার অনেক উন্নয়ন করলেও আমরা বাবুর অত্যাচারে বাধ্য হয়ে বিজেপিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু এবার আর বিজেপিকে ভোট দেব না। সন্ত্রাসের নায়কই তো এখন বিজেপিতে। আমরা শান্তি চাই।
সন্ত্রাসের অভিযোগের প্রসঙ্গে বাবু মাস্টার বলেন, আমিই সন্ত্রাসের শিকার হয়েছি। আমাকে খুন করার জন্য তৃণমূল বোমা ও গুলি নিয়ে হামলা করেছিল। কোনওমতে বেঁচে গিয়েছি। আমার নামে চক্রান্ত করে একাধিক মিথ্যে মামলা করা হয়েছে। মানুষ আমাকে ভালোবাসে। সেই কারণে, বিরোধীরা মিথ্যে অভিযোগ তোলে। আমাকে বিজেপি কর্মীরা অল্পদিনের মধ্যেই আপন করে নিয়েছেন। হিঙ্গলগঞ্জে এবার পদ্ম ফুটবে।
বিজেপি প্রার্থী নিমাই দাস বলেন, লোকসভা ও পঞ্চায়েত ভোটে মানুষের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। বোমাগুলি রাজনীতি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষ ফুঁসছে। এবার মানুষ ভোট দিতে পারলে বিজেপিই জিতবে। কিন্তু তৃণমূলের সন্ত্রাসের কাণ্ডারী বাবু মাস্টার তো বিজেপিতে? এই প্রশ্নে বলেন, উনি বিজেপিতে এসেছেন এটা ঠিক। ওঁর কর্মীরাও বিজেপির হয়ে প্রচার করছেন। তৃণমূল বাবু মাস্টারদের দিয়ে খারাপ কাজ করিয়েছে। বিজেপি এই ধরনের অন্যায়কে পশ্রয় দেয় না। দলের নিয়ম ও গঠনতন্ত্র যাঁরা মানবেন তাঁরাই দলে থাকতে পারবেন।
সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত সিপিআই প্রার্থী রঞ্জন মণ্ডল বলেন, এতদিন তৃণমূল হিঙ্গলগঞ্জে ভোট লুট করে জিতেছে। কিন্তু ভোট লুটের কারিগররা এখন বিজেপিতে। মানুষ এই দুই দলের আদর্শহীন নেতাদের দেখে তিতিবিরক্ত। মানুষ ভোট দিতে পারলে আমরাই জিতব। তৃণমূল প্রার্থী দেবেশ মণ্ডল বলেন, হাসনাবাদে মুখ্যমন্ত্রী বনবিবি সেতু তৈরি করে সুন্দরবনবাসীকে নতুন সকাল উপহার দিয়েছেন। এছাড়া নতুন রাস্তা, সেতু, কংক্রিটের বাঁধ, জলপ্রকল্পের মতো কত উন্নয়নের কাজ হয়েছে তা বলে শেষ করা যাবে না। তাছাড়া বাবু মাস্টারের মতো অত্যাচারী লোক দল থেকে বিদায় নেওয়ায় দলের কর্মীরা হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন। সাধারণ মানুষের কাছেও আমাদের দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। গতবারের থেকেও এবার আমরা বেশি ভোটে জিতব।