রাজনীতিক ও পেশাদারদের ব্যস্ততা বাড়বে। বয়স্করা শরীর স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিন। ধনযোগ আছে। ... বিশদ
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাধের ‘প্ল্যানড সিটি’ সল্টলেক। রাজ্যের ঝাঁ-চকচকে অভিজাত শহরগুলির মধ্যে অন্যতম। বিধাননগর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত মোট ১৮টি পুর ওয়ার্ড রয়েছে। যার মধ্যে ১৪টি ওয়ার্ড বিধাননগর পুরনিগমের এবং বাকি চারটি দক্ষিণ দমদম পুরসভার অন্তর্গত। বিধাননগর পুরনিগমের খাস সল্টলেক এলাকার বাসিন্দা সৌমিত্র ঘোষ। তাঁর বক্তব্য, গত ১০ বছর বিধাননগরের ভোল পাল্টে গিয়েছে। খালপাড় এবং তার সংলগ্ন রাস্তা নিয়ে বহুদিনের অভিযোগ ছিল। বর্তমান শাসক দলের তরফে খাল সংস্কার করে সংলগ্ন রাস্তাটিকে নতুন করে তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। বিধাননগরে মশার উৎপাত অনেকটাই কমেছে। তবে সমস্যা যে সম্পূর্ণ দূর হয়নি তাও মেনে নিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে বিভিন্ন ব্লকের ভিতরে রাস্তাঘাট নতুন করে তৈরি করা হয়। তবে তাতে লাভ কিছুই হয়নি। গত বছরের থেকে তা ফের ভাঙতে শুরু করেছে। এ অভিযোগ এনেছেন এবি ব্লকের এক বাসিন্দা। প্রসঙ্গত, গত বছর পুজোর সময় বিধায়ক তহবিল থেকে রাস্তা মেরামতির জন্য অর্থ ব্যয় করেন তৃণমূল প্রার্থী সুজিত বসু। সম্প্রতি পুরসভার তৎপরতায় সল্টলেক সহ ৪১টি ওয়ার্ডে এলইডি স্ট্রিটলাইট বসানোর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগ তৃণমূলের পক্ষে যাবে।
অভিজাত এলাকার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে একাধিক আবাসন এবং নিম্নবিত্ত শ্রেণির বসতি রয়েছে। বৈশাখী, বনশ্রী, আবাসন, পুলিস আবাসন ইত্যাদির এলাকার রাস্তাঘাট, পানীয় জল এবং পানীয় জলের মানোন্নয়ন অক্সিজেন যোগাচ্ছে ঘাসফুল শিবিরকে। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের নিরিখে বর্তমান শাসক দলের অ্যাডভান্টেজ পয়েন্ট দত্তাবাদ এবং দক্ষিণদাঁড়ি, লেকটাউন, গোলাঘাটা, বাঙ্গুর সংলগ্ন এলাকা। গত দুই বিধানসভা নির্বাচনের হিসেব বলছে, বিধাননগরের এই সমস্ত সংযুক্ত এলাকা তৃণমূলের ভোট ব্যাঙ্ক। সুজিত বসু বলেন, বিধাননগরে মানুষের সমর্থনে এবার জয় নিশ্চিত। প্রাক্তন ‘বন্ধু’ তথা বিজেপি প্রার্থী সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য, আমার সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত কোনও শত্রুতা নেই। নির্বাচনে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করব।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে, ২০১১ সালে প্রভাব না থাকলেও গত বিধানসভা ভোটে নিজেদের শক্তি অনেকটাই বাড়িয়েছে গেরুয়া শিবির। যার প্রভাব লক্ষ করা গিয়েছে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটেও। এবার সল্টলেক এবং সংযুক্ত এলাকার অবাঙালি ভোটের উপরেই নির্ভর করছে সব্যসাচীর ভাগ্য। সল্টলেকের সবকটি ব্লক মিলিয়ে অবাঙালি ভোটারের সংখ্যা যথেষ্ট। সেই পকেটগুলিকেই কার্যত পাখির চোখ করতে চাইছে পদ্ম শিবির। বিজেপি প্রার্থী সব্যসাচী দত্তের বক্তব্য, বিধাননগর পুরসভার মেয়র থাকাকালীন সেন্ট্রাল পার্ক মেলা প্রাঙ্গণ এবং ফুটপাতগুলি থেকে অবৈধ দখলদার সরিয়ে দিয়েছিলাম। এতে বিধাননগরবাসী অত্যন্ত উপকৃত। সেই প্রভাব এবারের নির্বাচনে পড়বে। তৃণমূল প্রার্থী সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তাঁর মন্তব্য, ওঁর থেকে সংযুক্ত মোর্চার কংগ্রেস প্রার্থী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বেশি শক্তিশালী। কারণ তার কোনও নেগেটিভ পয়েন্ট নেই। অন্যদিকে, বর্তমান বিধায়ক ২০০১, ২০০৬ সালে এই কেন্দ্রে হেরে যান। ১৭ এপ্রিলের ভোটেও তিনি মোটামুটি হেরে গিয়েছেন। প্রতিক্রিয়ায় সুজিত বসু বলেন, ২ মে তা স্পষ্ট হয়ে যাবে।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০১১ সালে তৃণমূলের ৬০ শতাংশ ভোটের তুলনায় বিজেপি পায় মাত্র ৪ শতাংশ। তবে সেবার বামেদের ভোট ছিল উল্লেখযোগ্য। প্রায় ৩৫ শতাংশ। ২০১৬ সালে জোট বাঁধে বাম-কংগ্রেস। তাতে বিজেপি এবং কংগ্রেসের ভোটের ঝুলি ভারী হলেও দুর্বল হয়ে যায় তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক। প্রায় ১০ শতাংশের বেশি ভোট বাড়িয়ে নেয় গেরুয়া শিবির। সেই আশাতেই এবার বিধাননগরে পদ্ম ফোটাতে মরিয়া বিজেপি। তবে এই রাজনৈতিক অঙ্কে বড় ফ্যাক্টর হতে পারেন সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী। তাঁর মতে, বিধাননগরের শিক্ষিত মানুষজন কংগ্রেসের পাশে রয়েছেন। তৃণমূল এবং বিজেপির প্রতিনিধিদের মধ্যে তাঁরা নিজেদের খুঁজে পান না। প্রার্থীর মতে, পুরভোটে নাগরিক পেটানো, সিন্ডিকেটের ওকালতি করা এবং তোলাবাজির নিরিখে তাঁরা বিধাননগরে বড় নাম। গত বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল বাম-কংগ্রেস জোট। সেই ভোট শতাংশ অক্ষুণ্ণ থাকলে বিধাননগরে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল।