বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
রানাঘাট উত্তর-পশ্চিম কেন্দ্রে তৃণমূল-বিজেপি যুযুধান দুই শিবিরের প্রার্থীই এবার দলবদলু। কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়ে প্রার্থী হয়েছেন শঙ্কর সিংহ। বিধানসভার খাতায় তিনি এখনও এই কেন্দ্রের কংগ্রেস বিধায়ক। অন্যদিকে, তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় ভোটে দাঁড়িয়েছেন বিজেপি’র টিকিটে। ফলে এই ইস্যু যথেষ্টই প্রভাব ফেলেছে রানাঘাটবাসীর মনে।
প্রার্থীরা কেমন? স্টেশন লাগোয়া বাজারে এই প্রশ্ন করতেই এক দোকানদার বললেন, বিজেপি’র টিকিটে যিনি দাঁড়িয়েছেন, তিনি যখন যেদিকে হওয়া, সেদিকে চলে যান। ২০১১ সালে তৃণমূলের পাল্লা ভারী ছিল। তাই ঘাসফুলে গিয়েছিলেন কংগ্রেস ছেড়ে। এবার আবার দাঁড়িয়েছেন পদ্মফুলে। ফলে বুঝতেই পারছেন, তাঁকে ভরসা করা একটু সমস্যার। আর তৃণমূল এখানে অনেক কাজ করেছে। বিশেষত পানীয় জলের সঙ্কট অনেকটাই মিটেছে। তাই শঙ্কর সিংহ কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে প্রার্থী হলেও অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য। তবে স্থানীয় নেতৃত্বের উপর মানুষের আস্থা কম।
একই সুরে তৃণমূলকেই ‘অ্যাডভান্টেজ’ দিলেন আরও এক ব্যবসায়ী বাবু মল্লিক। তাঁর কথায়, পানীয় জল, নিকাশি ও রাস্তা মেরামতের কাজ হয়েছে। এমনকী রানাঘাটে রবীন্দ্রভবন নির্মাণেরও উদ্যোগ নিয়েছে তৃণমূল। তাই পাল্লা ওইদিকেই ভারী। বিজেপি’র একটু হাওয়া আছে বটে, তবে ওদের প্রার্থীর জন্যই একটু পিছিয়ে থাকবে মোদির দল। দলবদল ছাড়াও রানাঘাট উত্তর-পশ্চিম কেন্দ্রের অন্যতম সমস্যা চূর্ণী নদী নিয়ে। সরকারের পর সরকার বদল হলেও নদী সংস্কার নিয়ে রা কাড়েনি কেউ। বাংলাদেশের চিনিকলের রাসায়নিক মিশে আজ দূষিত এই নদীর জল। যা নিয়ে চৌরঙ্গি মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা ক্ষুব্ধ সুমন পাল বলেন, চূর্ণী নদী দিয়েই কবিগুরু শিলাইদহে যেতেন। এখন সেই নদী খালের মতো সরু হয়ে গিয়েছে। দুর্গন্ধে নদীর আশপাশে দাঁড়ানো যায় না। সুভাষ অ্যাভিনিউয়ে কেনাকাটা করতে আসা বাসন্তী দে বলেন, রথতলা রেলগেটে প্রচণ্ড যানজট হয়। রোগীরাও আটকে যান। ফ্লাইওভার দরকার। সেই দাবিও আছে জোরদার। রেল এনিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করে না। বিজেপিকে যে ভোট দেব, তার তো কারণই খুঁজে পাচ্ছি না। মোদির দলের নেতাদের মুখে খালি ‘সোনার বাংলা’ হবে শুনছি। কিন্তু কীভাবে? সেটা বুঝতে পারছি না।
শেষ বিধানসভা নির্বাচনে শঙ্কর সিংহ কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী হন এই কেন্দ্রে। পরে তিনি তৃণমূলে যোগ দিলেও ব্যক্তি হিসেবে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। জয় নিয়ে আশাবাদী তিনি নিজেও। অন্যদিকে, বিজেপি প্রার্থী এক সময়ের পুর চেয়ারম্যান। যদিও তিনি একাধিকবার দল বদল করায় তাঁর সম্পর্কে মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে তিনি বলেন, একসময় বামেদের সরাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সততায় অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। পরে বুঝলাম ভাইপোকে প্রতিষ্ঠিত করতে দলটা তৈরি হয়েছে। তাই বিজেপিতে যোগ দিয়েছি। মানুষ আমাকেই চাইছে।
উল্লেখ্য, লোকসভা ভোটের পরিসংখ্যানে অনেকটাই এগিয়ে বিজেপি। কিন্তু, এই দু’বছরে সময় এবং পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে। বিজেপি’র জগন্নাথ সরকার সাংসদ হওয়ার পরে উল্লেখযোগ্য কিছুই করতে পারেননি বলে রানাঘাটবাসীর দাবি। ফলে, বিজেপি সেই এগিয়ে থাকার ফায়দা কী লুটতে পারবে, এই প্রশ্নই বড় হয়ে উঠে এসেছে রানাঘাট উত্তর-পশ্চিমে। এলাকাবাসী অবশ্য অঙ্কের ধারেকাছে না গিয়ে বাংলার আবেগকেই প্রাধান্য দিচ্ছে।