নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: চতুর্থ দফার ভোটের আগে বাম ভোটে কার্যত ‘তা’ দিয়ে গেলেন বিজেপির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। শুক্রবার কলকাতার এক অভিজাত হোটেলে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি স্পষ্ট করে দিলেন, ক্ষেত্র বিশেষে বামেরা কিছু ভালো কাজ করেছে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার মানুষের সঙ্গে কেবল অন্যায় করেছেন। শনিবার ভোটের ঠিক আগের দিনে পরিবর্তনের জমানার একাধিক ব্যর্থতার দিক তুলে ধরেন শাহ। তাঁর দাবি, দিদির শাসনে রাজ্যে মহিলারা অসুরক্ষিত, চাকরি নেই, তোলাবাজি-সিন্ডিকেট-গোরু পাচারের সঙ্গে যুক্ত শাসক নেতারা। তাই বিধানসভা ভোটে তৃণমূল কংগ্রেস কীভাবে বাংলার মানুষের ভোট চাইছেন, সেই প্রশ্নও তোলেন। তারপরই হঠাৎ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর গলায় উঠে আসে বাম প্রীতির সুর। অমিত শাহের কথায়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে কমিউনিস্টরা ভালো কাজ করেছে। কিন্তু দিদি স্রেফ অন্যায় করেছেন। উদাহরণ দিতে গিয়ে উত্তরবঙ্গের প্রসঙ্গ টেনে আনেন শাহ। তাঁর দাবি, কোচ, রাজবংশীদের জন্য কিছু করেনি মমতার সরকার। ক্ষমতায় এলে উত্তরবঙ্গ, কলকাতা তথা গোটা রাজ্যের জন্য বিজেপি কী কী করবে, তার লম্বা ফিরিস্তি শোনান মোদির প্রধান সেনাপতি। রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, লোকসভা নির্বাচনে ‘বামের ভোট রামে’ গিয়েছে বলে দাবি করেছেন স্বয়ং মমতা। চলতি বিধানসভা ভোটে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না করার আবেদনও জানিয়েছেন তিনি। সেই আবহে বিগত বামফ্রন্ট সরকারের খানিক প্রশংসা করে বাম ভোটকে নিজেদের দিকেই টানতে এই অমিত উদ্যোগ। এদিন অমিত শাহ দাবি করেছেন, শেষ তিন দফার বিজেপি কমপক্ষে ৬৩ থেকে ৬৮টি সিট পাবে।
অমিত শাহের এই ভবিষ্যত বাণী নিয়ে অবশ্য কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। বিজেপি’র বিরুদ্ধে শুধু আক্রমণ করাই নয়, অমিত শাহের ভবিষ্যৎবাণী আগের নির্বাচনগুলিতে যে একটিও মেলেনি, সেটাই তুলে ধরল তৃণমূল। রাজ্যের শাসক দলের তরফে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেওয়া হল ‘শ্রেষ্ঠ জ্যোতিষী’র তকমা। তৃণমূল নেতা ডেরেক ও ব্রায়েন ও পূর্ণেন্দু বসু বলেন, বিজেপি শুধু মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তৃণমূল নেতা সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, বিহার, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড, দিল্লির নির্বাচনে অমিত শাহের ভবিষ্যৎবাণী মেলেনি। সেই রাজ্যের মানুষ বিজেপিকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। এবার বাংলাতেও সেই অবস্থা হবে বিজেপির। এই প্রেক্ষাপটে রাজনীতি ছেড়ে ‘জ্যোতিষী’ হওয়া অমিত শাহকে ‘ভারতরত্ন’ দেওয়ার দাবি করেছেন সুখেন্দুশেখর রায়। রাজ্য সরকারকে প্রতিদিনই অপমানিত করছে, মিথ্যা রটনা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের। কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে অভিযোগ আগেই ছিল। তা সত্ত্বেও রাজ্য যেভাবে এগিয়ে চলেছে, সেটাই তুলে ধরা হয়েছে শাসক দলের তরফে। অথচ বিজেপি এখনও পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী কে, সেটা ঘোষণা করতে পারল না। তাঁর কটাক্ষ, অন্ততপক্ষে, এটা প্রকাশ করুক বিজেপি, কে হবেন বিরোধী দলনেতা!