নিজস্ব প্রতিনিধি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও সংবাদদাতা বারুইপুর: দক্ষিণ ২৪ পরগনায় একাধিক কেন্দ্রে নতুন মুখকে প্রার্থী করা হতে পারে, সেই জল্পনা আগে থেকেই ছিল। শুক্রবার তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর সেই জল্পনার অবসান হয়েছে। তবে কয়েকটি কেন্দ্রে প্রার্থী বদল না হওয়ায় অবাক হয়েছেন অনেকেই। আবার টিকিট প্রত্যাশীদের একাংশ প্রার্থী তালিকায় ঠাঁই না পাওয়ায় ক্ষোভ জন্মেছে তাঁদের মধ্যে। বিভিন্ন জায়গায় বিদ্রোহের আঁচও পাওয়া যাচ্ছে।
জেলার ৩১টি আসনের মধ্যে ১২টিতেই নতুন প্রার্থী দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। ক্যানিং পশ্চিম, ডায়মন্ডহারবার, ফলতা, সোনারপুর দক্ষিণ, যাদবপুর, বেহালা পূর্ব, বাসন্তী, কুলতলি, রায়দিঘি, বারুইপুর পূর্ব, ভাঙড় এবং সাতগাছিয়া কেন্দ্রে এবার দেখা যাবে নতুন মুখ। তার মধ্যে ডায়মন্ডহারবারে তৃণমূল ছেড়ে দীপক হালদার বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় সেখানে প্রার্থী বদল করা হয়েছে। এই কেন্দ্রে ডায়মন্ডহারবার পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান পান্নালাল হালদারকে টিকিট দেওয়া হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, তিনি তৃণমূলের মাদার সংগঠনের সদস্য।
অন্যদিকে, করোনায় মৃত্যু হয়েছিল ফলতার বিধায়ক তমোনাশ ঘোষের। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সেখানে মতুন মুখকে প্রার্থী করতে হয়েছে। দু’বার বিধায়ক থাকার পর এবার আর টিকিট পাননি রায়দিঘির বিধায়ক দেবশ্রী রায় এবং সোনারপুর দক্ষিণের জীবন মুখোপাধ্যায়। দলীয় সূত্রে খবর, দু’জনের বিরুদ্ধেই স্থানীয় স্তরে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। রায়দিঘিতে স্থানীয় প্রার্থী দেওয়া হলেও, সোনারপুর দক্ষিণে এক তারকার উপরেই ভরসা রেখেছেন তৃণমূল নেত্রী। এই আসনে টেলি অভিনেত্রী লাভলি মৈত্রর নাম ঘোষণা করেছেন তিনি। বারুইপুর পূর্বে এবারই প্রথম টিকিট পেয়েছেন বিভাস সরদার।
কয়েকটি কেন্দ্রে তৃণমূলের অন্দরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রবল। তা সত্ত্বেও সেখানে প্রার্থী বদলের ঝুঁকি নেয়নি দল। জয়নগরে বিশ্বনাথ দাসকে প্রার্থী করা হয়েছে। কিন্তু কুলতলিতে যুবনেতা গণেশ মণ্ডলকে প্রার্থী করায় বিদ্রোহের আঁচ পাওয়া গিয়েছে তৃণমূলের একাংশের মধ্যে। ভাঙড়ে আরাবুল ইসলাম প্রার্থী না হওয়ায় প্রকাশ্যেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। তাঁর অনুগামীরা পাওয়ার গ্রিডের কাছে হাড়োয়া রোড অবরোধ করেন। তাঁরা সেখানকার পার্টি অফিস ভাঙচুর করে পতাকা, ফেস্টুন পুড়িয়ে দিয়েছেন বলে খবর। আরাবুল বলেন, এই দলকে বুকে আগলে রেখেছিলাম। আজ দলের কাছে আমার প্রয়োজন ফুরিয়ে গিয়েছে।
নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণার আগে থেকেই বিধায়ক সোনালি গুহকে নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছিল সাতগাছিয়ায়। সেই কথা মাথায় রেখেই এবার তাঁকে টিকিট না দিয়ে বিষ্ণুপুর ২ নম্বর ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি মোহনচন্দ্র নস্করকে প্রার্থী করা হয়েছে। টিকিট না পাওয়ায় কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মমতার এককালের এই ছায়াসঙ্গী। পাশাপাশি, শহরকেন্দ্রিক ছ’টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে যাদবপুর ও বেহালা পূর্ব কেন্দ্রে এবার নতুন প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। এই দু’টি কেন্দ্রে যথাক্রমে দেবব্রত মজুমদার এবং রত্না চক্রবর্তীকে প্রার্থী করেছে ঘাসফুল শিবির।