কর্মে অগ্রগতি ও নতুন কাজের বরাত প্রাপ্তি। আইটি কর্মীদের শুভ। মানসিক চঞ্চলতার জন্য বিদ্যাচর্চায় বাধা। ... বিশদ
উল্টোডাঙার বাসিন্দা অন্নপূর্ণাদেবী রবিবার বলছিলেন, ‘মেয়েকে হারিয়েছি ১৫ বছর আগে। স্বামীকেও হারালাম। অথচ, এতগুলি বছর পরেও কেন আমার মেয়ের মৃত্যু-মামলার শুনানি শুরু হল না, সেটাই আমার কাছে বড় আশ্চর্যের! আমার একটাই আর্জি, এবার অন্তত মামলার দ্রুত শুনানি শুরু হোক। আদালতের প্রতি ভরসা রয়েছে। আমার স্থির বিশ্বাস, একদিন না একদিন ন্যায় বিচার পাবই।’
অনুশীলার মৃত্যুকে ‘স্বাভাবিক’ বলে মেনে নিতে পারেননি শৈবালবাবু। ফলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে পুলিস, প্রশাসন, আদালত সহ নানা দপ্তরে বছরের পর বছর ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। অন্নপূর্ণাদেবীর কথায়,‘ওঁর খুব আশা ছিল ন্যায় বিচার মিলবেই। কিন্তু গভীর দুঃখের বিষয়, বিচার শুরুর আগেই ও নিজেই চলে গেল!’ শৈবালবাবুদের বাড়িটি বেশ পুরনো। ভিতরের ঘরের দেওয়ালে টাঙানো ছোট্ট অনুশীলার হাসিমাখা ছবি। সেগুলির দিকে তাকিয়ে অন্নপূর্ণাদেবী বলছিলেন, ‘আমার মেয়েটা খুব ছটফটে ছিল। ওর এইসব ছবিই এখন আমাদের বিশাল বাড়িটাকে আলোকিত করে রেখেছে।’
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৫ সালের ঘটনা। ক’দিন ধরেই জ্বর ও বমি হচ্ছিল অনুশীলার। স্থানীয় চিকিৎসক দেখিয়েও কমছিল না। পরে তাকে ভর্তি করা হয় উত্তর কলকাতার এক বেসরকারি নার্সিংহোমে। শিশুটির রক্ত পরীক্ষা করা হয়। তাতে ডেঙ্গুর রিপোর্ট পজিটিভ আসে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় অনুশীলা। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে শৈবালবাবু শ্যামপুকুর থানায় পাঁচ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে পুলিস একটি ফৌজদারি মামলা রুজু করে। আদালতের নির্দেশে অনুশীলার দেহ কবর থেকে তুলে ফের ময়নাতদন্তও করা হয়। দীর্ঘ তদন্তের শেষে পুলিস ব্যাঙ্কশাল কোর্টে চার্জশিট পেশ করে। মামলাটি বিচারের জন্য যায় ১৫ নং মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। পরবর্তী সময় অভিযুক্তরা আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন।
কিন্তু প্রশ্ন হল মামলার বিচার প্রক্রিয়া এত বিলম্বিত হওয়ার কারণ কী? বিশেষ সরকারি আইনজীবী গণেশ মাইতি বলেন, ‘নানা আইনি গেরোর কারণেই বিচার প্রক্রিয়ায় এই দেরি। তবে, সমস্ত জটিলতা কাটিয়ে ২০১৮ সালে অভিযুক্ত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে মামলার শুনানি শুরুর নির্দেশ দেয় ব্যাঙ্কশাল আদালত। তার ভিত্তিতে সাক্ষ্য দিতে মৃত শিশুকন্যার বাবার কাছে সমন পাঠানো হয়। কিন্তু সাক্ষ্য‑গ্রহণের দিন জানা যায়, তিনি মারা গিয়েছেন। বিষয়টি আদালতের নজরেও আনা হয়। ফলে পিছিয়ে যায় শুনানি।’ আইনজীবীদের একাংশের মতে, কোনও সাক্ষী বা অভিযুক্ত মারা গেলে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী অফিসারকে তদন্ত করে রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ দেয় আদালত। সেই রিপোর্ট আসার পরই সেই সাক্ষী বা অভিযুক্তকে মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়ে থাকে। সরকারি আইনজীবী জানিয়েছেন, পরবর্তী শুনানির দিন ওই সাক্ষীর মৃত্যুর বিষয়ে তদন্তকারী পুলিস অফিসার কোর্টে রিপোর্ট পেশ করে কি না, সেটাই এখন দেখার।