পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
এনআরএস-এর মনোরোগ বিভাগের মতামতের উপর নির্ভর করে মাকে সন্তানের থেকে আলাদা রাখার এই কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেন? দুধের শিশুকে কি মায়ের সঙ্গে রাখা যেত না? হাসপাতালে মনোরোগ বিভাগের প্রধান আশিস মুখোপাধ্যায় বলেন , ‘বিভাগীয় বহু চিকিৎসক ওই মাকে দেখেছেন। নিজেও দেখেছি। ও সন্তানের যত্ন নিচ্ছিল না, বাচ্চাকে উল্টোপাল্টা জিনিস খাওয়াচ্ছিল। আমরা দেখে বুঝি, মা সাইকোসিস-এ আক্রান্ত। পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার রয়েছে। কখনও কখনও আত্মহত্যাপ্রবণ। এই অবস্থায় ওর সামনে ওর সন্তানকে রেখে দেওয়া মারাত্মক বিপজ্জনক হতে পারে। বিষয়টি আপাতদৃষ্টিতে নির্মম মনে হলেও বাচ্চাটির নিরাপত্তার কথা ভেবে এই সিদ্ধান্ত।’
মঙ্গলবার মাকে সন্তানের থেকে বিচ্ছিন্ন করার সময় মুক্তা কি পিছুটান অনুভব করেছিলেন? যাঁর দায়িত্বে এই কাজ হয়েছিল, হাসপাতালে সেই কর্তা বলেন, ‘মুক্তাকে আমরা বোঝাই। ও মেয়েকে বুকে নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে ছিল। তারপর কথা না বলে আমাদের সঙ্গে পাভলভে যাওয়ার গাড়িতে ওঠে।’
বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দেবাঞ্জন পান বলেন, ‘সন্তান জন্ম দেওয়ার পরপরই খিটখিটে ভাব, কিছু ভালো না লাগা, অবসন্নতা ইত্যাদি সমস্যায় বেশ কিছু মা ভোগেন। একে বলা হয় ‘পিউরপেরাম ডিপ্রেশন’। আসলে সন্তানধারণের সঙ্গে বেশ কিছু হরমোন ক্ষরণের সম্পর্ক আছে। সন্তান পৃথিবীর আলো দেখার পর সেই হরমোন ক্ষরণগুলি বন্ধ হয়ে যায়। মস্তিষ্কের এই নতুন পরিস্থিতির মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়। তখনই কারও কারও সমস্যা দেখা যায়। কিন্তু বিষয়টি ই যখন সাইকোসিসের রূপ নেয়, মারাত্মক বিপদ হতে পারে। জন্মদাত্রী মা তখন মানসিক রোগীতে পরিণত হন। এক বিচ্ছিন্ন জগতে বসবাস করেন। সন্তানের ভালো-মন্দ কিছুই তাঁকে আলোড়িত করে না। তাই আত্মজের ক্ষতি করাটা তাঁর পক্ষে অস্বাভাবিক নয়।’
হাসপাতাল সূত্রের খবর, মুক্তা জানিয়েছিলেন, এটি তাঁর দ্বিতীয় সন্তান । প্রথম সন্তানকে নিয়ে স্টেশনে অপেক্ষা করার সময় সে চুরি হয়ে যায়। স্বামী তাঁকে প্রচণ্ড মারধর করত। চিকিৎসকরা বলছেন, মনের সমস্যায় মুক্তা আদৌ সত্যি বলছেন, নাকি সবটাই কাল্পনিক, বলা মুশকিল। তবে এই ধরনের ঘটনায় মা সন্তানের পুনর্মিলন কমই হয়। ফের দেখা হলে মুক্তার কি মনে হবে, ‘মন যে বলে চিনি চিনি।’