নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: শিশু পাচার বা সদ্যোজাতকে বিক্রির মামলায় কঠোর পদক্ষেপ করল কলকাতা হাইকোর্ট। রাজ্যের দাবি, শিশুটি মারা গিয়েছে। কিন্তু, বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অনিরুদ্ধ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ সাফ জানিয়েছে, রাজ্যের এমন দাবি আপাতদৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়। 
বেঞ্চের নির্দেশ, হুগলির পুলিস সুপারকে এক সপ্তাহের মধ্যে এই ব্যাপারে আদালতে রিপোর্ট দাখিল করতে হবে। সিআইডিকে আলাদা তদন্ত শুরু করতে হবে। বিশেষত আরামবাগ থানার তদন্তকারী অফিসার সম্পর্কে। যে অফিসারের সঙ্গে সেখানকার নার্সিংহোম এবং ডাক্তারদের সম্ভাব্য যোগসাজস সম্পর্কে অভিযোগ উঠেছে।
মামলাকারী সুভাষ লাহার ছেলের সঙ্গে অর্পিতার বিয়ে হয়। আগস্ট মাসে ছেলেটি দেওয়াল চাপা পড়ে মারা যান। অর্পিতা তখন আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। মামলার বয়ান অনুযায়ী, অর্পিতাকে তাঁর বাবা ও অন্যরা শ্বশুরবাড়ি থেকে নিজেদের কাছে নিয়ে যান। ৩ সেপ্টেম্বর নির্দিষ্ট সময়ের আগেই অর্পিতা পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। অভিযোগ, বউমার বাবা বা আরামবাগের ওই নার্সিংহোমটির ডাক্তারদের ষড়যন্ত্রে শিশুটিকে বিক্রি অথবা পাচার করা হয়েছে। কিন্তু, মামলাকারীকে তার জন্মের খবরই দেওয়া হয় পরে। অন্যদিকে অর্পিতা পুলিসে অভিযোগ দায়ের করার 
চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। সবদিক বিবেচনা করে মামলাকারী আরামবাগ আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন। সেই আদালতের নির্দেশে অর্পিতা ছাড়াও তাঁর বাবা ও কয়েকজন 
আত্মীয় এবং নার্সিংহোমটির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়।
মামলাকারীর আইনজীবী নীলাদ্রিশেখর ঘোষ আদালতকে জানান, এরপরই পুলিস সুভাষবাবুকে থানায় ডেকে পাঠায়। গিয়ে দেখেন, অর্পিতা, তাঁর বাবা ও নার্সিংহোমের একজন সেখানে হাজির। তদন্তকারী পুলিস অফিসার তাঁকে বিষয়টি আপসে মিটিয়ে নিতে বলেন। বিনিময়ে ক্ষতিপূরণ মিলবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়। প্রস্তাবে রাজি না-হলে তাঁকে অন্যান্য মামলায় নাজেহাল করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। ওই আইনজীবী দাবি করেন, নার্সিংহোমটির সঙ্গে পুলিসের ভালোরকম যোগসাজস আছে। ষড়যন্ত্র করেই শিশুটিকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মামলাটির পূর্ব শুনানিতে পুলিসি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল, মামলাকারীর সঙ্গে তাঁর বউমার মতবিরোধ আছে। মামলাকারী শিশুটির দায়িত্ব নিতে চান না। কিন্তু, পরের শুনানিতে পুলিস আদালতকে অন্য কাহিনী শোনায়। বলা হয়, সদ্যোজাত শিশুর চিকিৎসার খরচ বহন করতে অপারগ জানার পর অর্পিতাকে ৩ সেপ্টেম্বর নার্সিংহোম ছেড়ে দেয়। আর্থিক অপারগতার কারণেই তাঁরা শিশুটিকে ডাক্তার শ্রীকান্ত পুস্তির গাড়িচালকের হাতে তুলে দেন। গাড়িচালক পুলিসকে জানান, অন্য এক ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার সময় শিশুটি মারা যায়। তার দেহটি একটি সেতু থেকে নদীতে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়। তল্লাশি করেও দেহটি মেলেনি। সেই সূত্রে তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এই কাহিনীতে আস্থা না-রেখে বেঞ্চ সিআইডিকে বলেছে, স্বতন্ত্র তদন্ত চালাতে হবে। সেই কাজে আরামবাগ থানাকে সবরকম সহযোগিতা দিতে হবে। মামলার পরবর্তী শুনানি এক সপ্তাহ পরে।