পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
লোকাল ট্রেন চালু করেছে রেল। তাতে নিত্যযাত্রীরা বেশ কিছুটা লাভবান হয়েছেন। কিন্তু স্টেশনের হকাররা সেই তিমিরেই। দমদম স্টেশনের ৪ নম্বর প্লাটফর্মে চায়ের দোকান রয়েছে তরুণ রায়ের। দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে স্টেশনে দোকানদারি করছেন তিনি। বললেন, ‘লকডাউনের সময়টা কতটা খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে কেটেছে তা বলে বোঝানো যাবে না। ট্রেন চালু হওয়ার ৩ দিন পর দোকান খুলেছি। কিন্তু সারাদিনে ১৫০ টাকাও লাভ করতে পারছি না।’ পাশেই প্রদীপ কুণ্ডুর লটারির দোকান। তিনি বলেন, ‘লটারির টিকিট নিয়ে বসেছি, কিন্তু আমার ভাগ্যের উন্নতি কিছুতেই হচ্ছে না। যেখানে লকডাউনের দিনে কয়েক হাজার টাকার টিকিট বিক্রি করেছি, এখন তার ধারেকাছেও নেই।’
প্রায় ১০ বছর ধরে হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় ফল বিক্রি করেন সালকিয়ার বাসিন্দা ব্রিজেশ সোনকার। তাঁরও আফসোস, ‘লোকাল ট্রেন চললেও সেই ভিড় একেবারেই হচ্ছে না। অফিসযাত্রীরা আমাদের বড় অংশের ক্রেতা। অনেকে এই মূল্যবৃদ্ধির বাজারে আলু, পেঁয়াজ, শাক-সব্জি কিনতেই নাস্তানাবুদ হয়ে যাচ্ছেন। এখন তো ফল কেনা যেন একপ্রকার বিলাসিতা।’ স্টেশন চত্বরে বাসস্ট্যান্ডে সুরেশ সাউয়ের ভাতের হোটেল খুলেছে সম্প্রতি। তাঁর কথায়, ‘এখন বাইরের খাবার অনেকেই খাচ্ছেন না। এখন দেখছি, ব্যাগ থেকে টিফিন কৌটো বের করে বাড়ির খাবার খাচ্ছেন। আমরা মাছি তাড়াচ্ছি।’
উত্তর শহরতলির মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন দমদম। শিয়ালদহ মেইন শাখার ট্রেন চলে। আবার বসিরহাট, বনগাঁ শাখার ট্রেন চলাচল করে। ডানকুনি যাওয়ার ট্রেন যাত্রীরা পান এই স্টেশন থেকে। আবার দমদম স্টেশন থেকে মাঝেরহাট, প্রিন্সেপ ঘাট যাওয়ার ট্রেন পাওয়া যায়। গুরুদাস হল্ট হয়ে দক্ষিণ শাখার স্টেশনে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। শহরতলির প্রাণকেন্দ্রে এই দমদম স্টেশন।
লোকাল ট্রেন চালু হওয়ার পর এক নম্বর প্লাটফর্মে এখনও পর্যন্ত চপের দোকান খুলতে পারেননি বলে জানান বিক্রেতা শ্যামল দাস। তাঁর বক্তব্য, ‘প্লাটফর্মে স্টোভ জ্বালানোর অনুমতি এখনও পাওয়া যায়নি। ফলে দোকান বন্ধ রাখতে হয়েছে। রাজ্য সরকারের দেওয়া রেশনের চাল দিয়ে কোনওরকমে দিন চলছে। হকারদের জন্য সরকারি সাহায্যের প্রত্যাশা করছি।’ আবার স্টেশনের দুই নম্বর প্লাটফর্মে বসে ৩৭ বছর ধরে জুতো পালিশ করছেন ভরত দাস। তাঁর বক্তব্য, ‘আগে দিনে ৪০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত রোজগার কোনও বিষয় ছিল না। এখন লোকাল ট্রেন চালু হলেও যাত্রীরা জুতো পালিশ করাতে আসছেন না। সারাদিনে মেরেকেটে ১০০-১৫০ টাকা আয় হচ্ছে।’ স্টেশনের ২ নম্বর প্লাটফর্মে ৭৫ বছরের পুরনো চায়ের দোকান উমাশঙ্কর সাউয়ের। তিনি বলেন, ‘পৈতৃক দোকান আমার। বিক্রি-বাট্টা দেখে দোকানে প্যাটিস তোলার সাহস পাচ্ছি না। শুধু চা, বিস্কুট, কেক বিক্রি করছি।' আবার স্টেশনের এক নম্বর প্লাটফর্মে থাকা আলুকাবলি, ঝালমুড়ি বিক্রেতা বুলা দাস বলেন, 'কবে স্বাভাবিক ছন্দ ফিরবে তারই অপেক্ষা করতে হচ্ছে।’
শহরতলির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন বারাকপুর ও বারাসত। সেখানেও প্লাটফর্মে বসা হকাররা করুণ অবস্থার কথা জানিয়েছেন। বারাকপুর স্টেশনে ৪০টির মতো দোকান রয়েছে। সেই ভাবে এখনও খোলেনি। তবে কাঁচরাপাড়া স্টেশন ১২০ জনের মতো হকার দোকান খুলেছেন। বারাসত স্টেশনে ৩০০-৩৫০ মতো হকার রয়েছেন। সবাই এখনও দোকান খোলেননি। বিক্রি-বাট্টা আশানুরূপ নয় বলে জানান বিক্রেতারা। তাই দু'দিন খুলে আবার একদিন বন্ধ রাখতে হচ্ছে অনেককে।