বিশ্বজিৎ মাইতি, বারাসত: করোনা মহামারি পুজোর জৌলুস ও জাঁকজমকে থাবা বসালেও, প্রানের উৎসবের আবেগ কেড়ে নিতে পারেনি। সেকারণে,মাতৃ আরাধনার মন্ত্রে এবার করোনা জয়ে বদ্ধপরিকর বারাসত ও মধ্যমগ্রামের বিভিন্ন পুজো উদ্যোক্তারা। কোথাও রাজবাড়ির আদলে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ, কোথাও আবার মা বসবেন একচালার খোলা মণ্ডপে। কোথাও ডাকের সাজে মা আসবেন সনাতনী রূপে, কোথাও আবার সন্তানদের কষ্টে মা আসবেন সাদামাটা গ্রাম্য বধূর সাজে। তবে প্রতিটি মণ্ডপেই করোনা নিয়ে বিশেষ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। পুজোর খরচ বাঁচিয়ে সামাজিক কর্মকাণ্ডে প্রত্যেকেই কমবেশি নানান কর্মসূচি নিয়েছে। বারাসতের চারের পল্লি সর্বজনীনের পুজো এবার ৩৯বছরে পা দিয়েছে। তাদের বাজেট প্রায় ১২লক্ষ টাকা। থিম ‘আবার অলিন্দে’। পুরাতন রাজবাড়ির আদলে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। রাজবাড়ির জৌলুস ও জাঁকজমক ফুটিয়ে তোলা হবে মণ্ডপের ছত্রে ছত্রে। মণ্ডপের বাইরে থাকবে তুলসিতলা। মা আসবেন রাজকীয় ডাকের সাজে। পুজো কমিটির কর্মকর্তা সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, বাজেট গত বারের থেকে অনেক কমাতে হয়েছে। তারমধ্যে করোনা সচেতনতা, মাস্ক বিলি, দুঃস্থদের বস্ত্র বিতরণ সহ অন্যান্য সামাজিক কাজ করা হবে। শ্বেতপুকুর সার্বজনীন পুজো সমিতির দুর্গাপুজো এবার ৬৬বছরে পড়েছে। গতবারের প্রায় ২০লক্ষ টাকার বাজেট এবার কমিয়ে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। সরকারি নিয়ম মেনে তিন দিক খোলা একচালার মণ্ডপে মা আসবেন সাবেকি ডাকের সাজে। মণ্ডপে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে যাঁরা থাকবেন, তাঁদের মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার সর্বক্ষণের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পুজো কমিটির কর্ণধার সুব্রত সেন বলেন, এবার থিমের মণ্ডপ, জমকালো উদ্বোধন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাদ রাখা হয়েছে। সরকারি নিয়ম মেনে পুজো ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের দিকে জোর দেওয়া হয়েছে। বিবেকানন্দ সেবা সমিতির পুজো ৬০ বছরে পা দিয়েছে। বাজেট প্রায় চার লাখা টাকা। এক চালার মণ্ডপে মা আসবেন ডাকের সাজে। ক্লাবের সভাপতি তথা বারাসত পুরসভার প্রশাসক সুনীল মুখোপাধ্যায় বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে অনাড়ম্বর পুজোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পুজোর খরচ বাঁচিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো হবে। মধ্যমগ্রামের দেবীগড় বিজলি পার্ক সবর্জনীনের পুজো ৩০ বছরে পা দিয়েছে।
এবার তাদের থিম রাজবাড়ি। তবে রাজবাড়ির জৌলুসের মধ্যেও মা আসবেন সাবেকি গ্রাম্য গৃহবধূর সাজে। লাল পাড় সাদা শাড়ি পরানো হবে মাকে। মায়ের শরীরে অলঙ্কার থাকবে না। মায়ের গলায় থাকবে রুদ্রাক্ষের মালা। এছাড়া পুজোর কয়েক দিন এলাকার দুঃস্থদের পাশে দাঁড়াতে নানান উদ্যোগ নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে। পুজো কমিটির কর্ণধার শান্তনু সর বলেন, দীর্ঘ লকডাউন ও করোনা সঙ্কটে নিশ্চয়ই মর্মাহত। সন্তানদের এই হাহাকারের মাঝে মায়ের সাজগোজে তেমন আগ্রহ থাকবেনা। সেকারণে মাকে আমরা গ্রাম্যবধূর সাজে সাজাব। উদয়রাজপুর পেয়ারাবাগানের পুজো এবার ৫২বছরে পড়েছে। তাদের বাজেট প্রায় ৪ লক্ষ টাকা। সাবেকি মণ্ডপে মা আসবেন ডাকের সাজে। সমস্ত অনুষ্ঠান ও জাঁকজমক বাতিল করা হয়েছে। পুজো কমিটির যুগ্ম সম্পাদক দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশে দর্শনার্থীদের মণ্ডপে ঢুকতে দেওয়া হবেনা। তাঁরা যাতে নিরাপদ দূরত্ব থেকেই প্রতিমা দর্শন করতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। বারাসত নবপল্লি কাঠালতলা সর্বজনীনের প্রতিমা।