বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
একের পর এক করোনা যোদ্ধা এখন করোনা আক্রান্ত। নার্স থেকে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট, সাধারণ কর্মী থেকে চিকিৎসক। যাঁরা গতকাল বা আগের দিনই পিপিই পরে ওয়ার্ডে ঘামতে ঘামতে পালস অক্সিমিটারে রোগীর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা দেখেছেন, জরুরি পরীক্ষার জন্য রক্ত টেনেছেন, ‘এই যায়, সেই যায়’ অবস্থা দেখে প্রাণান্তকর চেষ্টা করেছেন প্রাণে বাঁচাতে, আজ দেখা যাচ্ছে, তাঁরাই আক্রান্ত। যেখানে এতদিন চিকিৎসা করেছেন, সেখানেই এখন তাঁদের চিকিৎসা চলছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের অভাবের সময়ে, তাঁদের সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন ওই ‘কোভিড যোদ্ধা’ জুনিয়র ডাক্তার। যিনি বর্তমানে করোনা পজিটিভ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। তা সত্ত্বেও সুযোগ পেলেই ছুটছেন করোনা রোগীদের পাশে দাঁড়াতে। তাঁদের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করতে। তাঁদের চিকিৎসা সংক্রান্ত জরুরি কাগজপত্র লিখতে। রক্তপরীক্ষার রিক্যুইজিশন স্লিপ পাঠাতে। ইসিজি করতে বা সিটি স্ক্যানের সময় সাহায্য করতে। এমন অভিনব ঘটনাটি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ কোভিড হাসপাতালের।
মেডিক্যাল সূত্রের খবর, এখানকার মেধাবী ছাত্র তথা জুনিয়র ডাক্তার দক্ষিণ শহরতলির বাসিন্দা প্রাণেশ সরকার (নাম পরিবর্তিত) শুক্রবার করোনায় আক্রান্ত হন। তাঁকে মেডিক্যালের করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার সুপার স্পেশালিটি ব্লকের ১০ তলায় কেবিনে ভর্তি করা হয়।
কিন্তু, আপনার যে করোনা হয়েছে? অকুতোভয় প্রাণেশ বললেন, ‘তাতে কী? শুক্রবার সামান্য শুকনো কাশি নিয়ে ভর্তি হই। করোনা রিপোর্ট পজিটিভ থাকলেও তেমন কোনও উপসর্গ নেই। কী করব সারাদিন শুয়ে শুয়ে। চোখের সামনে দেখছি রোগীদের অবস্থা। তাঁদের একাকীত্ব, বিষণ্ণতা। অন্যদিকে সবাইকে চিকিৎসা করার মতো ডাক্তারের সংখ্যাও যত দিন যাচ্ছে, কমছে। কিছুদিন আগেও আমরা যাঁরা একসঙ্গে কাজ করেছিলাম, তাঁদের অনেকেই এখন আক্রান্ত! এই যে আমি যেখানে আছি, এসএসবি ব্লকের ১০ তলায়, সেখানকার কেবিনগুলিতে আমার সঙ্গী-সাথী বহু চিকিৎসক ভর্তি। ভর্তি অন্য রোগীরাও। এই পরিস্থিতি নিজে ডাক্তার হয়ে যতটা সাধ্য চেষ্টা করছি।’ ‘কিন্তু, ওয়ার্ডে কোভিড রোগীদের দেখতে যেসব ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মী আসছেন, তাঁরা তো আপনি কাছে গেলেই পজিটিভ হয়ে যেতে পারেন?’ প্রাণেশের উত্তর, ‘তাঁরা আপাদমস্তক পিপিই স্যুট পরে আছেন। ফলে সংক্রমণের আশঙ্কা নেই।’
মেডিক্যালের করোনা মোকাবিলায় গঠিত টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান উদাস ঘোষ বলেন, ‘দারুণ মানবিক প্রয়াস। আমরা চিকিৎসা করতে গিয়ে দেখছি, পাশের বেডের রোগী অন্য রোগীকে দুটি সাহসের কথা বললে কতটা মানসিক জোর পায়। সেদিক থেকে কোনও কোভিড পজিটিভ ডাক্তার যদি অন্য পজিটিভ রোগীর পাশে দাঁড়ান— সে তো মনে জোর পাবেই। এখানে দুটি প্রশ্ন থাকতে পারে, এক, ওঁর থেকে অন্যরা সংক্রামিত হতে পারে কি না? উত্তর হল, ও এই কাজ করছে কোভিড ওয়ার্ডে, যেখানে সকলেই আক্রান্ত। দ্বিতীয় প্রশ্ন, করোনা ধরা পরার পরও এই কাজ করলে ওঁর শারীরিক ক্ষতি হবে না তো? উত্তর হল, ও বর্তমানে উপসর্গহীন। শারীরিক দিক থেকে অনেকটাই সুস্থ। তাই রোগীদের পাশে দাঁড়ানোর কাজ করতে পারছে। আমাদের তরফ থেকে প্রচুর আশীর্বাদ রইল।’
শুক্রবার পজিটিভ হয়েছেন, পুজো কি তা হলে হাসপাতালেই কাটবে? উত্তরে ফোনের ওইপ্রান্ত থেকে এল প্রাণখোলা হাসির শব্দ। প্রাণেশ বললেন, ‘এমনিতেই পুজো কাটত ওয়ার্ডেই। এখনও কাটবে ওয়ার্ডেই। তারই মধ্যে যতটা ডিউটি করা যায়...।’