গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
জানা গিয়েছে, বকেয়া সম্পত্তি করের পরিমাণ কয়েকশো কোটি টাকা। লকডাউনের বাজারে এমনিতেই পুরসভার আয় তলানিতে এসে ঠেকেছে। আনলক পর্বে ধীরে ধীরে হাল ফিরলেও বকেয়া আদায়ের পরিমাণ আশানুরূপ নয়। তাই এই টাকা উদ্ধারে এখন উঠে পড়ে লেগেছে কর্তৃপক্ষ। এখন ওয়েভারের স্কিমে কত টাকা কোষাগারে ঢোকে, সেই অপেক্ষায় বসে আছে পুরসভা। তবে শুধু ওয়েভার স্কিমে ভরসা না রেখে আর কোন কোন ক্ষেত্র থেকে আয় বাড়ানো যায়, তা নিয়ে প্রতিদিনই অঙ্ক কষছেন আধিকারিকরা। তাঁদের প্রাথমিক লক্ষ্য বকেয়া আদায়। তবে এক কোটি বা তার উপরে যাঁদের সম্পত্তি কর বকেয়া, শুরুতে তাঁদের দিকেই নজর পড়েছে আধিকারিকদের।
শুধু নোটিস পাঠিয়ে অপেক্ষায় বসে থাকা নয়। যদি দেখা যায়, আইনি সমস্যা বা এই জাতীয় কোনও জটিলতার জন্য কেউ কর জমা দিতে পারছেন না, সেক্ষেত্রে আলাদা কথা। তবে যদি দেখা যায়, সমস্যা না থাকা সত্ত্বেও কেউ বকেয়া টাকা জমা দিচ্ছেন না, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সম্প্রতি বকেয়া কর না জমা দেওয়ায় মধ্য কলকাতার একটি হোটেল বন্ধ করে দিয়েছিল পুরসভা। তাদের বকেয়ার পরিমাণ ছিল ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকার কিছু বেশি। মালিকপক্ষ এর মধ্যে ২৫ লক্ষ টাকা মিটিয়েছিল। বাদবাকি টাকা দিতে গড়িমসি করছিল। বাধ্য হয়েই পুরসভা হোটেলটি বন্ধ করে দেয়। পরে তারা পুরসভার দ্বারস্থ হয়ে আরও ১০ লক্ষ টাকা দেওয়ার পর হোটেলের তালা খোলা হয়। বাকি টাকা পুরসভাকে ধাপে ধাপে মেটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন হোটেল মালিক।
এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, বকেয়া সম্পত্তি কর আদায়ের ক্ষেত্রে মূলত তিন-চারটি বিষয়কে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী তালিকা তৈরি করে ধরা হচ্ছে। কী সেই মাপকাঠি? প্রথমত, যাঁদের বকেয়ার পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত, তাঁদের বর্তমান আর্থিক অবস্থা কেমন। যদি দেখা যায়, আর্থিক সক্ষমতা নেই, তাহলে আবেদনের ভিত্তিতে তাঁদের কিছুটা কর-ছাড়ের সুযোগ হয়তো দেওয়া হবে। দ্বিতীয়ত, সঠিকভাবে কর মূল্যায়ন না হওয়ার অভিযোগ থাকলে ফের ইন্সপেকশন করে চূড়ান্ত বিল পাঠানো হবে। তৃতীয়ত, অনেকক্ষেত্রে দেখা যায়, খাতায় যাঁর নাম রয়েছে, তিনি ভাড়াটিয়াদের উপর নির্ভরশীল। ভাড়াটিয়ারা নিয়মিত টাকা না দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট মালিক কর মেটাতে পারছেন না। সেক্ষেত্রে বিশেষ অধিকার বলে ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের পন্থা অবলম্বন করতে পারে পুরসভা। চতুর্থত, আইনি জটিলতা থাকলে আদালতে গিয়ে পুরসভা সমস্যা মেটানোর উদ্যোগ নিতে পারে।
বকেয়া সম্পত্তি করের পরিমাণ সুদে-আসলে গিয়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকারও বেশি। প্রতিবছর যা নিয়মিত বেড়েইে চলেছে। করদাতার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৮ লক্ষ। যাঁদের সম্পত্তি কর কোটির উপরে বকেয়া, সেই সংখ্যা অবশ্য আহামরি নয়। মোট করদাতার পাঁচ শতাংশেরও কম। কিন্তু টাকার অঙ্ক বিশাল। দীর্ঘদিন ধরেই নানা অজুহাতে এঁরা সম্পত্তি কর দেন না। কলকাতা পুরসভার মুখ্য প্রশাসক ফিরহাদ হাকিমের নির্দেশ, রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। সেইমতো সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বে থাকা প্রশাসকমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য অতীন ঘোষ আধিকারিকদের উঠে-পড়ে লাগার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই মতো তাঁরাও কোটি পেরনো করদাতাদের তালিকা বিশ্লেষণ করে রাজস্ব আদায়ে কোমর বাঁধছেন।