নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: গোরু পাচার কাণ্ডের তদন্তে নেমে বেনিয়াপুকুর থানার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মহম্মদ এনামুল হক ওরফে বিশুর সঙ্গে বিএসএফ কর্তা সতীশ কুমারের ‘আঁতাত’ এখন সিবিআই স্ক্যানারে। গোরু পাচার কারবারের অন্যতম চাঁই এই এনামুল। গত ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে প্রায় দেড় বছর মালদহে কর্মরত থাকা বিএসএফের এই কমান্ডান্টের সঙ্গে তাঁর সখ্যের শিকড় কতটা গভীরে পৌঁছেছিল, সেটাই খুঁজে বেড়াচ্ছেন তদন্তকারীরা। বুধবারই ওই বিএসএফ কর্তা, এনামুল, আনারুল শেখ এবং গোলাম মুস্তাফার বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে সিবিআই। আর তারপরই কলকাতা, মুর্শিদাবাদ, শিলিগুড়ি সহ দেশের ১৫টি জায়গায় দিনভর হানা দিয়ে এনামুল-সতীশ কুমারের ‘আঁতাতে’র সুলুক সন্ধান চলেছে। একসময় বিএসএফের ২০ এবং ৩৮ নম্বর ব্যাটালিয়নের কমান্ডান্ট হিসেবে মালদহে কর্মরত সতীশ কুমারের পোস্টিং এখন ছত্তিশগড়ের রায়পুরে। রায়পুরের পাশাপাশি এদিন সিবিআই হানা দিয়েছিল তাঁর উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ এবং এ রাজ্যের সল্টলেকের বি জে ব্লকের বাড়িতে। হানা দেওয়া হয়েছে এনামুল হকের কলকাতার তিলজলা, তপসিয়ার বাড়ি, বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের অফিসের সদর দপ্তর, শিলিগুড়ি এবং আদি বাসস্থান মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন অংশে। গোরু পাচার কারবারের ‘লম্বা হাত’ খুঁজতে হানা দেওয়া হয়েছে পাঞ্জাবের অমৃতসরেও। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযানে বেশ কিছু নথিপত্র আটক করা হয়েছে। যা থেকে গোরু পাচার কারবারের সঙ্গেই হাওয়ালা কারবার সম্পর্কিত নানা তথ্যও মিলেছে। ডিরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্সের একটি মামলায় বর্তমানে জামিনে থাকা এনামুলের মোবাইল এদিন ছিল ‘সুইচড অফ’। এসএমএস পাঠিয়েও তাঁর তরফ থেকে কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি। সিবিআই সূত্রে আরও খবর, ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে বিএসএফর ২০ নম্বর ব্যাটালিয়নের কমান্ডান্ট হিসেবে মালদহে কাজে যোগ দেন সতীশ কুমার। তারপরই এনামুলের সঙ্গে তাঁর ‘বন্ধুত্ব’ গড়ে ওঠে। এরপর ওই জেলারই ৩৬ নম্বর ব্যাটালিয়নের কমান্ডান্ট থাকাকালীন সতীশ কুমারের সঙ্গে মিত্রতার বন্ধন আরও বাড়ান এনামুল। ওই পর্বেই গোরু পাচারে এনামুল বাহিনীকে ‘সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার’ অভিযোগ উঠেছে সতীশ কুমারের বিরুদ্ধে। বিনিময়ে পাচারের জন্য নির্ধারিত প্রতিটি গোরু পিছু দু’হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল সীমান্ত সুরক্ষায় নিয়োজিত এই কর্তা এবং তাঁর পছন্দের এক শ্রেণীর আধিকারিকদের জন্য। এই বিষয়টি এফআইআরে উল্লেখ করেছে সিবিআই। তবে সতীশ কুমারের সঙ্গে এনামুল হকের ‘আঁতাত’ শুধুমাত্র ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল না বলেই জানাচ্ছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা। নানা উৎসব-পার্বনে এনামুলের তরফে বিএসএফ কর্তার পরিবারের কাছেও পৌঁছে যেত ‘ভেট’। এমনকী সতীশ কুমারের অনুরোধে তাঁর ছেলেকে নিজের একটি সংস্থায় চাকরি দেন এনামুল। সিবিআই এফআইআরে লিখেছে, গত ২০১৭ সালের মে মাস থেকে প্রায় ১০ মাস টানা এনামুলের সংস্থায় চাকরি করেছেন বিএসএফ কর্তা সতীশ কুমারের ছেলে। বেতন পেতেন ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। যাকে দু’পক্ষের ‘অশুভ আঁতাত’ বলে ব্যাখ্যা করছে সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, বিএসএফ কর্তাদের সঙ্গে এনামুলের সখ্যের আরও উদাহরণও রয়েছে। মুর্শিদাবাদে বিএসএফের একটি ব্যাটালিয়নের কমান্ডান্টের ‘মুঠো গরম’ করার অভিযোগে গত ২০১৮ সালের মার্চ মাসে সিবিআইয়ের কোচি ইউনিট গ্রেপ্তার করেছিল এনামুলকে। বিএসএফের ওই কর্তার নাম জিবু টি ম্যাথু। তাকে ওই বছরের ১৮ জানুয়ারি কেরলের আলাপ্পুঝা স্টেশন থেকে নগদ ৪৭ লক্ষ টাকা সহ গ্রেপ্তার করেছিল সিবিআই।  বিএসএফ কর্তার সল্টলেকের বাড়িতে হানা সিবিআইয়ের। -নিজস্ব চিত্র