পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
বিভিন্ন সমীক্ষার সন্তোষজনক রিপোর্ট দেখে স্বাস্থ্যদপ্তর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, অন্তত তিনবেলা নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে যদি করোনা রোগীদের নাক পরিষ্কার রাখা যায়, তাহলে রোগীর ‘ভাইরাল লোড’ বা ভাইরাসের সংখ্যা কমে কি না দেখা হবে। যেমন ভাবা তেমনই কাজ। স্প্রে করার মেশিনের মাধ্যমে তিন শতাংশ স্যালাইনজল দিয়ে শুরু হয়েছে বাঙ্গুরের করোনা রোগীদের ‘নেজাল ওয়াশ’! ঘাড় কাত করে স্প্রে করে একদিকের নাসাছিদ্র দিয়ে স্যালাইনজল ঢোকানো হচ্ছে। অন্য নাক দিয়ে বের করা হচ্ছে।
প্রাচীন যোগবিদ্যায় অনুরূপ প্রক্রিয়াটি হল ‘নাসাধৌতি’ বা ‘জলনেতী’। হঠযোগী মৎস্যেন্দ্রনাথ নাসাধৌতিরও প্রবর্তন করেন। তাহলে কি শেষমেশ মর্ডান মেডিসিন বা অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসাকে হাত ধরতেই হল প্রাচীন যোগের? তাও কোভিড হাসপাতালেই? এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালের সুপার ডাঃ শিশির নস্কর বলেন, আমরা বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্রের সূত্র ধরে করোনা রোগীদের ‘নেজাল ওয়াশ’ করার গবেষণা শুরু করেছি। ‘নাসাধৌতি’র সঙ্গে যোগ আছে কিনা, আমার জানা নেই। এক মাস ধরে চলবে এই গবেষণা। দিনে তিনবার ‘নেজাল ওয়াশ’ করছেন রোগীরা। আমাদের বিশ্বাস, ফলাফল খুব ভালো হবে। রোগ না হলেও, যে কেউ স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে দিনে দু’বার এভাবে নাক পরিষ্কার রাখতে পারেন। স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডাঃ অজয় চক্রবর্তী বলেন, বাঙ্গুরে এই গবেষণা শুরু হয়েছে। রাজ্য যোগ কাউন্সিলের সভাপতি তুষার শীল বলেন, এতদিনের প্রাচীন বিদ্যা এমনি এমনি টিকে থাকে না। চেন্নাইয়ের করোনা হাসপাতালে এই পদ্ধতির প্রয়োগ হচ্ছে। বহু অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসকও করোনা তাড়াতে ও ভাইরাল লোড কমাতেও নিয়মিত ‘নাসাধৌতি’ করছেন।
শ্বাসপ্রশ্বাসের জায়গা নাসাপথ পরিষ্কার রাখা, রোমে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা বের করা ইত্যাদি কারণে ‘সূত্রনেতী’ ও ‘জলনেতী’ নামে দু’ধরনের ‘নেতী’র অভ্যাস চলে। মোটা সুতোয় মোম দিয়ে ‘সূত্রনেতী’র অভ্যাস গৃহস্থদের পক্ষে কঠিন বলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘জননেতী’ বা ‘নাসাধৌতি’। এই পদ্ধতিতে একদিকের নাসারন্ধ্রে জল দিয়ে অন্যদিকের নাসারন্ধ্র দিয়ে বের করা হয়। যদিও সঠিক গুরু বা যোগবিশারদের তত্ত্বাবধানেই এর অভ্যাস করা জরুরি। এম আর বাঙ্গুরের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ১০ দিন হল শুরু হয়েছে এই সমীক্ষা। ৩০ জন মৃদু ও মাঝারি উপসর্গ থাকা করোনা রোগীর ‘নেজাল ওয়াশ’ করা হচ্ছে। অন্য ৩০ জনের করা হচ্ছে না। এভাবে তুলনামূলক বিচার চলছে। ১০০ এমএল জলে ঈষদুষ্ণ জলে এক চামচ নুন দিয়ে মাথা কাত করে স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে একদিকের নাসাছিদ্র দিয়ে অল্প করে করে জল ঢেলে অন্যদিকের নাসাছিদ্র দিয়ে সেই জল বের করতে হয়। করোনা ভাইরাস নাক দিয়ে ঢুকে নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে ধীরে ধীরে ফুসফুসে নামতে থাকে। নাসিকাগহ্বরে এর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তাই ‘নেজাল ওয়াশ’-এর মাধ্যমে এই ভাইরাসগুলিকেই বের করা ও নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা করা হয়।