কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
মাত্র ১৩ বছর বয়স। একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী অদ্রিজা মণ্ডল। এত অল্প বয়সে এমন চরম এক সিদ্ধান্ত নিল কেন পুলিসকর্মীর ওই কন্যা? উত্তরও ওই সুইসাইড নোটেই দিয়ে গিয়েছে অদ্রিজা। লিখেছে, অনেক চেষ্টা করেও পরীক্ষায় ভালো ফল তার কিছুতেই হল না। আইপিএস অফিসার হওয়ার ইচ্ছা তার অধরাই থেকে গেল। মানসিক অবসাদ তাকে গ্রাস করেছে। এই অবসাদই তাকে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দিয়েছে বলে প্রাথমিক অনুমান অন্য পুলিসকর্মীদের। কিন্তু ক্লাস সেভেনেই এত হতাশা দেখা দিল কেন তার মধ্যে? পরীক্ষায় ভালো ফল করার জন্য জীবনে আরও অনেক পথ তো পড়ে ছিল। এই কথাটাই এখন কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে ওই আবাসনের অন্য বাসিন্দাদের। ওই কিশোরী যে মনে মনে এতটাই ভেঙে পড়েছে, সেটাও ঘুণাক্ষরে টের পাননি তার বাবা-মা। এমনকী কিছুই বুঝতে পারেনি তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু, ক্লাস সেভেনেরই আরেক ছাত্রী শ্রেষ্ঠা। আগের দিন, সোমবারও, অদ্রিজাদেরই ফ্ল্যাটে তারা একসঙ্গে খেলাধুলো করেছে, টিভিতে কার্টুনও দেখেছে। তখন তো কিছুই বোঝা যায়নি। তাহলে? এদিন সকালে মোবাইল নিয়ে নাড়াচাড়া করার জন্য মা বকেছিলেন আদ্রিজাকে। সেখান থেকেই কি তাৎক্ষণিক ভাবে সে এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল? তাহলে এইরকম সুইসাইড নোট সে লিখল কখন? হতবাক সকলেই।
মঙ্গলবার ঘড়িতে তখন সকাল ১০টা। আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার পুলিস কোয়ার্টার থেকে পুলিসকর্মীরা ডিউটিতে বেরতে শুরু করেছেন। এই কমপ্লেক্সের মধ্যেই রয়েছে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা। পুলিসকর্মীরা থানায় আসা সাধারণ মানুষের অভিযোগ শুনতে ব্যস্ত। এমন সময়ে হঠাৎ কিছু পড়ার শব্দ কানে আসে থানায় থাকা পুলিসকর্মীদের। রাস্তার দিকের গেটে কিছু না মেলায়, থানার পিছনের গেটে যান এক পুলিসকর্মী। তাঁর নজরে আসে, রক্তাক্ত অবস্থায় সেখানে পড়ে রয়েছে এক কিশোরী। এই দৃশ্য দেখেই তিনি দ্রুত অন্য পুলিসকর্মীদের ডেকে আনেন। আবাসনের বিভিন্ন তলা থেকে নেমে আসেন অন্য বাসিন্দারা। তাঁদের মধ্যে একজন জানান, ওই কিশোরী জগন্নাথবাবুর মেয়ে। নাম অদ্রিজা মণ্ডল। এরপরই তাঁদের ফ্ল্যাটে খবর দেওয়া হয়। কান্নায় ভেঙে পড়েন তার মা। খবর দেওয়া হয় লালবাজারেও। উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন ওই ছাত্রীকে। কী কারণে সে আত্মঘাতী হল, তা তদন্ত করে দেখছে পুলিস।
অদ্রিজার ঘনিষ্ঠ বন্ধু শ্রেষ্ঠার কথায়, তারা দু’জনেই একই শ্রেণীতে পড়ত। কিন্তু দু’জনের স্কুল আলাদা ছিল। তারা একই গৃহশিক্ষকের কাছে অঙ্ক করতো। অদ্রিজাদের ফ্ল্যাটেই তাদের পড়াতেন ওই শিক্ষক। লকডাউনের জন্য স্কুল বন্ধ থাকায় তারা একে অন্যের ফ্ল্যাটে গিয়ে পড়াশোনা ও খেলাধুলো করতো। কয়েকদিন আগে অদ্রিজা ও তার বাবা-মা দেশের বাড়িতে গিয়েছিল। দু’দিন আগে তারা ফেরে। গতকালও অদ্রিজাদের ফ্ল্যাটে গিয়েছিল শ্রেষ্ঠা। দু’জনে গল্প করেছে, কার্টুনও দেখেছে। কিন্তু এইসবের মধ্যে তার বন্ধু যে এত বড়ো কাণ্ড ঘটাতে পারে, সেটা বিশ্বাসই করতে পারছে না শ্রেষ্ঠা।
জানা গিয়েছে, এদিন সকালে অদ্রিজা মোবাইল ফোনে কিছু একটা দেখছিল। তার মা এই নিয়ে সামান্য বকাবকি করেন তাকে। এরপরই সে সকলের নজর এড়িয়ে ১১ তলার ছাদে উঠে নীচে ঝাঁপ মারে।