গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
মেরেকেটে আধ ঘণ্টার ব্যবধান। ততক্ষণে সব শেষ। চারিদিকে শুধু ধোঁয়া আর ধোঁয়া। সিঁড়ি দিয়ে নামতেই পারছি না। একে একে অন্যান্য সহকর্মীরা আমাকে ফোন করছেন। সমীর কুমার বারিক, তুষার কান্তি বারিক, বিজয় সিং’রা ফোনে শুধু বলে চলেছেন, ‘মনকে শক্ত রেখো।’ ঘোর বিপদের সময় মন কি আর বাগ মানে? প্রথমে বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। সেটাই তো স্বাভাবিক!
আমি তখন কাঁপছি। মোবাইলটা আমার হাতে ধরা। রিং হচ্ছে। ফোন ধরতেই একজন বললেন—‘আমি হেয়ার স্ট্রিট থানার সাব-ইন্সপেক্টর নিরূপম দত্ত বলছি। আপনি ঠিক কোন জায়গায় রয়েছেন?’ আমি বললাম, ‘একদম উপরের তলায়।’ পরক্ষণেই ওই পুলিশকর্তার পরামর্শ, ‘আগুনের আঁচ উপরে উঠতে পারে। তেমন হলে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়াবেন। জলের কাছে থাকার চেষ্টা করুন। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। মনকে শক্ত রাখুন। আমরা ঠিক আপনাকে নামিয়ে আনবো।’ নিরুপমবাবুর আশ্বাসে আমার কাঁপুনি তখন একটু একটু করে কমছে। এক লাফেই ছাদে উঠে পড়ি। সম্পূর্ণ খোলা ছাদ। তাই আগুনের আঁচ পাইনি। উপর থেকেই দেখছি নিচে বিরাট কর্মযজ্ঞ চলছে। একদিকে আগুন নেভানোর। অন্যদিকে, আমাকে বাঁচানোর। বুক ভর্তি করে সাহসী-শ্বাস নিচ্ছি তখন। এক সেকেন্ডের জন্য আমার মনে হয়নি আমি একা। কেউ না কেউ সব সময় ফোন করছেন। যোগাযোগ রাখছেন নিরুপমবাবু। এখনও আমার কানে বাজছে সহকর্মীদের একটাই কথা—‘কোনও চিন্তা করিস না। তোর কিচ্ছু হবে না।’
সত্যিই আমার কিছু হয়নি। ভয়াল আগুনের সঙ্গে যুদ্ধে আমি জয়ী। ঘড়িতে তখন সাড়ে সাতটা কি পৌনে আটটা হবে। আমি নীচে নেমে এলাম। পুলিসের হাত ধরে সোজা পিজি হাসপাতাল। চিকিৎসকরা আমাকে পরীক্ষা করলেন। তাঁরা জানিয়ে দিলেন, ‘আপনি একদম ফিট।’ কোয়ার্টারে ফিরে প্রথম ফোনটা করি স্ত্রীকে। শেষ শ্রাবণের পুজো চলছিল বাড়িতে। স্ত্রী তো আমার কথা শুনেই আকাশ থেকে পড়ে! অত্যন্ত শান্ত গলায় ওদের সব কিছু বুঝিয়ে বলি। ছেলে বলল, ‘বাবা ভোলানাথই তোমাকে বাঁচিয়েছে!’
রাতের ঘুমটা আর ভালো হয়নি। কিছুতেই চোখ বন্ধ হচ্ছিল না। ভোরের দিকে একটু ঘুম আসে। সকাল থেকে বেশ ভালো আছি। তবে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের এই বিভীষিকা আমাকে সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হবে। সেই ১৯৯১ সাল থেকে এখানে চাকরি করছি। ৫২ বছরের জীবনে এই প্রথম। ভগবানের কাছে আমার প্রার্থনা, এটাই যেন শেষ অভিজ্ঞতা হয়। সকাল থেকে ফের পুরোদমে কাজে নেমে পড়েছি। খারাপ স্মৃতি আঁকড়ে রাখতে চাই না।