বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
করোনা আবহে সীমান্ত পারাপারে রয়েছে কড়া নজরদারি। বিশেষভাবে, যে সব এলাকায় কাঁটাতার নেই, সেখানে বিএসএফ জওয়ানদের সতর্কতা তুলনায় বেশি। নজরে রয়েছে জলসীমান্তও। দিনের আলোয় নজরদারি তুঙ্গে থাকায় পাচারকারীরা অপারেশন চালানোর জন্য বেছে নেয় গভীর রাতকে। মাঝ রাত থেকে ভোর রাত পর্যন্তই পাচারের উপযুক্ত সময় তাদের কাছে। সোমবার ভোরের আলো ফোটার আগে কুম্ভী ঘাসের গোছাকে আঁকড়ে ধরেই পণ্য নিয়ে ইছামতী পেরতে গিয়েছিল পাচারকারীরা। তারা ছিল জলের তলায়। দিচ্ছিল ডুবসাঁতার। মুখে ছিল ছোট ছোট পাইপ। যার শীর্ষভাগ উঠে ছিল জলের উপরে। নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য। সন্দেহের বশেই বিএসএফ-এর জওয়ানার তল্লাশি চালাতে গিয়ে কুম্ভী ঘাসের জালে জড়িয়ে থাকা পাচার সামগ্রীর খোঁজ পান। জওয়ানদের দেখে ওই সব পণ্য জলে রেখেই পালায় পাচারকারীরা। তাদের আটকাতে শূন্যে দু’ রাউন্ড গুলিও চালায় জওয়ানরা। তাদের ধরা যায়নি বটে, তবে আটকানো গিয়েছে পাচারের সামগ্রী। মাস্ক, ওষুধ, পালস অক্সিমিটার ছাড়াও কুম্ভী ঘাসের নীচে প্লাস্টিকে মোড়া বান্ডিলে ছিল বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী, জুতো, জামাকাপড় ইত্যাদি। যার বাজার মূল্য আনুমানিক ২১ লক্ষ ৬৯ হাজার টাকা।
বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি সুরিন্দর সিং গুলারিয়া বলেন, সাম্প্রতিককালে দেখতে পাচ্ছি, রাতের দিকে পাচারকারীদের কার্যকলাপ বেড়েছে। সেইমতো রাতে বাহিনীকে সতর্ক থাকতে বলেছি। বিএসএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, ইছামতী নদী লাগোয়া একটি লেক রয়েছে, যেটি বাংলাদেশ জলসীমান্তের খুব কাছে। সেই লেকের জলে কুম্ভী ঘাস ভেসে বেড়ায়। পাচারের জন্য এই ঘাসগুলিকেই ব্যবহার করা হয়েছিল। বিএসএফের এক কর্তা বলেন, সেই ঘাসগুলির নীচে দিয়ে দুষ্কৃতীরা এমনভাবে ডুব সাঁতার কেটে যাচ্ছিল যে, সাধারণ চোখে দেখলে মনে হবে, যেন জলের স্রোতে ভেসে যাচ্ছে ঘাসগুলি। উদ্ধার করা হয়েছে মোট ২০টি ব্যাগ। যা বাঁধা ছিল ওই ঘাসের সঙ্গে। পাচারকারীরা দড়ি বেঁধে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশের দিকে। জওয়ানরা প্রথমে জলের আওয়াজ ভেবে বিশেষ গুরুত্ব দেননি। কিন্তু ঘাসগুলি আড়াআড়ি যেতে দেখে সন্দেহ হয়। কিছু অস্বাভাবিকত্বও নজর আসে। তখনই জওয়ানরা দেখেন, যেন কিছু আসার অপেক্ষায় ইছামতীর ওপারে দাঁড়িয়ে রয়েছে কয়েকজন। তখনই তাঁরা চিৎকার করে পাচারকারীদের সতর্ক করে। কিন্তু দুষ্কৃতীরা নিজেদের কার্যকলাপ চালিয়ে যাওয়ায় জওয়ানরা শূন্যে গুলি চালান। পাশাপাশি, কার্যকলাপ বন্ধ না করলে গ্রেনেড ছোঁড়ারও হুমকি দেন। তখনই পাচারকারীরা সব কিছু জলে রেখেই দিয়েই ডুবসাঁতার দিয়ে পালিয়ে যায়। ডিআইজি জানিয়েছেন, যাবতীয় মালপত্র পেট্রাপোলের কাস্টমসের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, সোমবারই তারালি সীমান্তে প্রায় ৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকা মূল্যের শিঙি মাছের চারা বাজেয়াপ্ত করেছে বিএসএফ। ১১২ নম্বর ব্যাটালিয়নের কর্তারা জানিয়েছেন, ছয় থেকে আটজন লোক বেশ কয়েকটি ড্রাম নিয়ে এপার থেকে বাংলাদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। তখন তাদের দাঁড়াতে বলা হয়। কিন্তু পাটখেতের মধ্যে দিয়ে তারা সুযোগ বুঝে চম্পট দেয়। দেখা যায়, ড্রামগুলি শিঙি মাছের চারায় ভর্তি। বিএসএফ সেগুলি তেঁতুলিয়ায় কাস্টমস কর্তাদের হাতে তুলে দিয়েছে।