রাহুল চক্রবর্তী, কলকাতা: প্রতিদিনই ওয়ার্ড ঘুরে খোঁজ রাখতে হচ্ছে এলাকার মানুষের সমস্যার। তার উপর নর্দমা পরিষ্কার, রাস্তায় জল জমছে কি না— সেদিকেও নজর রাখতে হচ্ছে। আর এইসব সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন কাউন্সিলাররা। মারণ ভাইরাস কেড়ে নিচ্ছে জীবনও। তবুও দায়বদ্ধতার সেনানীরা ময়দান ছাড়তে নারাজ। সচেতনতার সঙ্গে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলার বার্তা দিচ্ছেন করোনা-জয়ী যোদ্ধারা। করোনার বিরুদ্ধে একেবারে সামনের সারিতে থেকে লড়াই করছেন চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, সাফাইকর্মী, পুলিস। এই লড়াইয়ে জনপ্রতিনিধিদের অবদান কোনও অংশে কম নয়। বিশেষ করে কাউন্সিলাদের। জানা গিয়েছে, এ পর্যন্ত কলকাতা পুরসভার পাঁচজন কো-অর্ডিনেটর করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সুস্থ হয়ে ফের কাজে নেমে পড়েছেন ৭ নম্বর বরোর কো-অর্ডিনেটর জীবন সাহা। তিনি জানালেন, ভয়ে গুটিয়ে রাখা যাবে না নিজেকে। কাজ করতেই হবে। এবার আরও বেশি করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার চেষ্টা করছি। করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর মন খারাপ হয়ে যায় দমদম পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটর বরুণ নট্টর। যদিও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মনকে বুঝিয়ে যুদ্ধজয়ের শপথ নেন তিনি। জানালেন, সুস্থ হয়ে পুরসভায় আসা শুরু করেছি। ঘরে একসঙ্গে দু-তিন জনের বেশি থাকতে দিচ্ছি না। চেয়ার রাখা হয়েছে দূরত্ব মেনে। আর সব সময় মুখে মাস্ক। এই পুরসভার আরও এক কো-অর্ডিনেটর আক্রান্ত হন। কিন্তু, সকলেই শপথ নেন, করোনার ভয়ে পিছিয়ে আসবেন না। দক্ষিণ দমদম পুরসভার চারজন কো-অর্ডিনেটরের শরীরে থাবা বসায় ভাইরাস। আক্রান্ত হয়েছেন পুর প্রশাসক পাচু রায়ও। তিনি এখন অনেকটাই সুস্থ। অন্য কাউন্সিলারদের প্রতি তাঁর বার্তা, গাড়িতে অনেক কর্মী নিয়ে চলা পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই মানুষের কাজ করতে হবে।
ভাইরাস কেড়ে নিয়েছে বিধাননগর পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার সুভাষ বসুর জীবন। মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) প্রণয় রায়ের বক্তব্য, ভিড় এড়িয়ে চলার উপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। বারাসত পুরসভার প্রশাসক সুনীল মুখোপাধ্যায়কে এই লড়াইয়ে জেতার মনোবল জুগিয়েছে চিকিৎসক ও নার্সদের আন্তরিকতা। তিনি বলেন, করোনা নিয়ে আতঙ্ক নয়, সাবধানে থাকাটাই জরুরি।
বাইরে থেকে এসে জামাকাপড় ছেড়ে ফেলে গরম জলে স্নান, ঈষদুষ্ণ জলে গার্গল, আদা-তেজপাতা দিয়ে চা—এই সমস্ত টোটকার কথাও শোনা যাচ্ছে জনপ্রতিনিধিদের মুখে।