বিতর্ক-বিবাদ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেম-পরিণয়ে মানসিক স্থিরতা নষ্ট। নানা উপায়ে অর্থোপার্জনের সুযোগ।প্রতিকার: অন্ধ ব্যক্তিকে সাদা ... বিশদ
কিন্তু তাসমিনা আর ‘পাঁচজন’ হতে চাননি। সেদিন বাবার মুখের উপর কড়া ভাষায় বলে দিয়েছিলেন—‘তোমাকে তো বলেই দিয়েছি, আমি এখন বিয়ে করব না। স্কুলে যাব। মন দিয়ে পড়াশোনা করব।’ তাঁর এই জেদের কাছে পিছু হটেন বাবা। তাসমিনার পাশে দাঁড়ান ডায়মন্ডহারবারের হটুগঞ্জ গার্লস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মানসী মণ্ডল। বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে তাঁর রুখে দাঁড়ানোকে কুর্নিশ করেন অন্যান্য শিক্ষিকারাও। আজ তাঁদের সকলের মান রেখেছেন তাসমিনা। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় মুখ উজ্জ্বল করেছেন স্কুলের। সেরা ছাত্রীদের তালিকায় নাম তুলেছেন তিনি। প্রাপ্ত নম্বর ৪২৮। তবুও বিজয়ীর চোখে-মুখে একরাশ হতাশা। আর বোধহয় কলেজে যাওয়া হবে না তাঁর!
কেন? দারিদ্রের অভিশাপ। গরিব পরিবার তাসমিনার। বাবার আয় বলতে তেমন কিছু নেই। সংসারে ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’। তার উপর কলেজে পড়াশোনার খরচ সামলানোর সামর্থ্য নেই বাবার। তাসমিনা বলছিলেন, ‘আমাদের মতো গরিব পরিবারে কলেজে পড়াশোনা করাটা বিলাসিতার শামিল। তাই এখনই উচ্চশিক্ষা নিয়ে কিছু ভাবছি না।
আমার বাবার আর্থিক অবস্থা ভালো
না। কলেজ ভর্তি হতে চাই না।
তাছাড়া আমার আরও বোন রয়েছে। আমার জন্য তাদের পড়াশোনা আটকে যাক, সেটাও আমার কাছে খুব যন্ত্রণার।’ তাই তাসমিনার এখন লক্ষ্য বাবাকে সাহায্য করা। কাজের সন্ধান শুরু করেছেন তিনি।
একাদশ শ্রেণীতে পড়ার সময়ই বিয়ে ঠিক হয় তাসমিনার। তাঁর বাবাই দেখাশোনা করে সম্বন্ধ ঠিক করেছিলেন। চেয়েছিলেন অভাবের সংসারে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বড় মেয়ের বিয়ে দিতে। প্রস্তুতিও প্রায় সেরে ফেলেছিলেন তিনি। কিন্তু বেঁকে বসেন তাসমিনা। নাছোড় বাবাও। শেষে প্রধান শিক্ষিকার সাহায্য চান একাদশের ছাত্রী। ডেকে পাঠানো হয় তাসমিনার বাবাকে।
বাল্য বিবাহের কুফল বোঝানো হয় তাঁকে। শেষ পর্যন্ত রাজি হন তিনি। বিয়ে রুখে স্কুলের তরফে পুরস্কৃত হন ‘কন্যাশ্রী’ তাসমিনা।
উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফলে সেই অতীত এখন ভুলে গিয়েছেন তাসমিনা। এবারের উচ্চ মাধ্যমিকে তিনটি বিষয়ে ৯০-এর উপরে নম্বর পেয়েছেন তিনি। তাঁর রেজাল্টে বেশ খুশি স্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রধান শিক্ষিকা বলছিলেন, ‘তাসমিনা নজির সৃষ্টি করেছে। আমরা ওর উদাহরণ তুলে ধরে নানা প্রচারমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। তাসমিনার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে স্কুলের একাধিক ছাত্রী নিজের বিয়ে বন্ধ করেছে।’