বিতর্ক-বিবাদ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেম-পরিণয়ে মানসিক স্থিরতা নষ্ট। নানা উপায়ে অর্থোপার্জনের সুযোগ।প্রতিকার: অন্ধ ব্যক্তিকে সাদা ... বিশদ
২০১৫ সালের ৩ জানুয়ারির রাত। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার দুই ছাত্রী সুমন্তিকা ও সুবর্ণা রাতের খাওয়া সেরে নিশ্চিন্তে শুতে গিয়েছিলেন যে যাঁর বিছানায়। তার আগে সুমন্তিকার বাবা জলপাইগুড়ির পাহাড়িপাড়ার বাসিন্দা দেবাশিসবাবু ফোন করেছিলেন তাঁকে। বেশ কিছুক্ষণ কথাও হয়েছিল তাঁদের মধ্যে। বাবাকে বলেছিলেন, কাল সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ ফোন করে ডেকে দিতে। ঠিক সময়েই ফোন করেছিলেন দেবাশিসবাবু। কিন্তু সাড়া মেলেনি। রুম মেট সুবর্ণার ফোনও বেজে গিয়েছিল। শেষ অবধি বাড়ির কর্ত্রীকে ফোন করেন তিনি। ওই মহিলা ছাত্রীদের ঘরের সামনে গিয়ে ডাকাডাকি করলেও ভিতর থেকে কোনও উত্তর আসেনি। শেষে এক প্রতিবেশীকে ডেকে এনে দরজা ভাঙলে দেখা যায় সুমন্তিকা ও সুবর্ণা দু’জনেই পড়ে রয়েছেন যে যাঁর বিছানায়। অচৈতন্য সুবর্ণার শরীরে মৃদু স্পন্দন মিললেও নিথর ছিল সুমন্তিকা। তাঁদের তৎক্ষণাৎ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসায় সাড়া দেন সুবর্ণা। কিন্তু সুমন্তিকার আর ঘুম ভাঙেনি।
পুলিস তদন্ত সাপেক্ষে ওই সংস্থার অফিসারদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়। সুবর্ণার বয়ান নথিভুক্ত করে। ময়নাতদন্ত ও ফরেনসিক রিপোর্ট বলছে, সুমন্তিকার রক্তে বিষাক্ত কার্বন মনোক্সাইড গ্যাসের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল। তদন্তে উঠে আসে, যে ঘরে ওই দুই ছাত্রী থাকতেন, তার জানালার নীচে দিয়েই গিয়েছিল গ্যাসের পাইপলাইন। সেই পাইপলাইনেই ফাটল ছিল। জানুয়ারির শীতের রাত বলে জানালা বন্ধ করে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে গিয়েছিলেন তাঁরা। তখনই পাইপের গ্যাস ঘরে ঢুকে বিষময় করে তুলেছিল বাতাসকে। যার ফলেই মৃত্যু। ফরেনসিক রিপোর্ট বলছে, ওই গ্যাস বিপজ্জনক। কারণ তাতে কার্বন মনোক্সাইড ছাড়াও মিথেন গ্যাস রয়েছে। এই গ্যাস যে শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক নয়, এমন প্রমাণ আদালতে তুলে ধরতে পারেনি সংস্থাটি। উল্লেখ্য, ওই ঘর থেকে পাওয়া গ্যাসের নমুনার সঙ্গে গ্রেটার ক্যালকাটা গ্যাস সাপ্লাই কর্পোরেশন লিমিটেডের গ্যাসের হুবহু মিল পাওয়া যায় তদন্তে। দেখা যায়, ওই গ্যাস সরবরাহ করার জন্য দূষণবিধি অনুযায়ী ‘কনসেন্ট টু অপারেট’ সার্টিফিকেট নেয়নি সংস্থাটি। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এই অনুমতি দেয়। রায়ে সেকথার উল্লেখ করেছে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল।
দেবাশিসবাবুর আইনজীবী সোমনাথ রায়চৌধুরী আদালতকে জানান, যে ক্ষতি হয়েছে, তা অপূরণীয়। আগাগোড়া ভালো ছাত্রী হিসেবে পরিচিত সুমন্তিকার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল ছিল। এই ক্ষতিকে টাকার অঙ্কে পরিমাপ করা যায় না। সওয়াল-জবাবের পর আদালত সবদিক খতিয়ে দেখে গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থাকে এক মাসের মধ্যে ওই পরিবারকে ৬৪ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেয়।