নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত: শহরের ডাম্পিং গ্রাউন্ডের জঞ্জালে ভরে গিয়েছে গ্রামের চাষজমি। আবর্জনা জমে মাঠের জল বের হওয়ার নিকাশি নালাও বন্ধ। দূষিত জল প্রায় সারা বছর জমে থাকছে জমিতে। পেটের তাগিদে মাঠে নামলেই গায়ে চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে চাষিদের। নানান তেল ও পোড়া মোবিল মেখে জমিতে নামতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা। শুধু কৃষিকাজের সমস্যা নয়, আবর্জনার দুর্গন্ধে বিস্তীর্ণ এলাকার গ্রামবাসীর নাভিশ্বাস উঠতে শুরু করেছে। বারাসত১ ব্লকের কদম্বগাছি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার এই ঘটনায় গ্রামবাসীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। চাষিদের অভিযোগ, শহরের নোংরা তাঁদের তিন ফসলি সোনার জমি কেড়ে নিয়েছে। পুরসভার তরফে অবশ্য সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কদম্বগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের কুবেরপুর মৌজায় বারাসত শহরের ডাম্পিং গ্রাউন্ড রয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে ওই জমিতে শহরের যাবতীয় নোংরাআবর্জনা ফেলা হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে আবর্জনা ফেলার ফলে ডাম্পিং গ্রাউন্ড উপচে আশপাশের এলাকায় নোংরা ছড়িয়ে পড়ছে। ওই ডাম্পিং গ্রাউন্ড লাগোয়া এলাকায় প্রায় ২০০ বিঘা চাষজমি রয়েছে। ময়লা ফেলার কাজ শুরু হওয়ার আগে স্থানীয় বেলঘরিয়া, পীরগাছা ও বিষ্ণুপুর গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে ওই জমি এককথায় সোনার থেকেও দামি ছিল। কারণ, তিন ফসলি জমিতে ধান ছাড়াও পাট, গম, তিল, সর্ষে সহ নানান চাষ হতো। প্রথমে ডাম্পিং গ্রাউন্ডের চারদিকে ইটের দেওয়াল তোলা হয়েছিল। কিন্তু কয়েক বছর যেতে না-যেতেই ওই দেওয়াল বহু জায়গায় ভেঙে পড়েছে। পাহাড়ের মতো উঁচু হয়ে জমে থাকা আবর্জনা আশপাশের জমিতে ছড়িয়ে পড়ছে। আবর্জনা জমে নিকাশি নালা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। নোংরা জল জমিতে জমে থাকায় চাষ ঠিকমতো হচ্ছে না। বহুবার স্থানীয়রা সমস্যা সমাধানের দাবি জানালেও কোনও লাভ হয়নি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভোট এলে নেতারা ওই ডাম্পিং গ্রাউন্ডে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান্ট বসিয়ে সার তৈরির আশ্বাস দেন। কিছুদিন মাটি খোঁড়ার কাজও শুরু হয়। কিন্তু ভোট ফুরলে সেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় চাষি আমজাদ আলি, অমৃতলাল ঘোষ সহ অন্যরা বলেন, গত চার বছর ধরে সমস্যা মারাত্মক আকার নিয়েছে। জমিতে সবসময় জল জমে থাকছে। বর্ষায় সমস্যা আরও তীব্র হচ্ছে। চাষের কাজে নামলে গায়ে চর্মরোগ হচ্ছে। চাষ সেইভাবে হচ্ছে না। এমনকী জমির ঘাস কেটে গোরুকেও খাওয়ানো যাচ্ছে না। পচা আবর্জনার গন্ধে বাড়িতে থাকা দায় হয়ে উঠেছে। কবে সমস্যার সমাধান হবে সেই অপেক্ষায় বসে রয়েছি।
কদম্বগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান গৌতম পাল বলেন, সমস্যার কথা পুরসভাকে জানানো হয়েছে। আশা করছি তারা দ্রুত পদক্ষেপ নেবে। পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের সদস্য তাপস দাশগুপ্ত বলেন, ২০১৩ সাল থেকে ওই জায়গায় আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। ওই ডাম্পিং গ্রাউন্ড লাগোয়া জমি কিনে শক্তপোক্ত সীমানা প্রাচীর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া আবর্জনা থেকে সার তৈরির পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে। করোনা পরিস্থিতির জেরে সবকিছু থমকে রয়েছে। নিজস্ব চিত্র