কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
ছেলের মৃত্যু সংবাদ শুনে হাসপাতালেই কান্নায় ভেঙে পড়েন দম্পতি। আক্ষেপের সুরে বলতে থাকেন, একের পর এক হাসপাতাল যদি না ফেরাত, ঘণ্টার পর ঘণ্টা যদি বাইরে ফেলে না রাখত, তাহলে হয়তো ছেলে বেঁচে যেত। আমাদের সব শেষ হয়ে গেল।
উত্তর বারাকপুরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শুভ্রজিৎ এবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তার। রাতে তা আরও বাড়ে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এমনিতেই শুভ্রজিতের ওজন স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই বেশি ছিল। সঙ্গে ছিল সুগার। তার বাবা বলেন, শুক্রবার সকালেই ছেলেকে নিয়ে আমি কামারহাটি ইএসআই হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সেখানে সুগার পরীক্ষা করতে গিয়ে ধরা পড়ে, রক্তে শর্করার পরিমাণ খুব বেশি। ইএসআই হাসপাতালে আইসিইউ নেই বলে তাকে রেফার করে দেওয়া হয় অন্য হাসপাতালে।
শনিবার ওই কিশোরের এক তুতো দাদা শুভ্রদীপ ফোনে বলেন, কামারহাটির একটি নার্সিংহোমে আমরা ভাইকে নিয়ে যাই। কিন্তু ওরা যেই শুনল শ্বাসকষ্টের কথা, তখন আমাদের ভিতরে ঢুকতেই দিল না। বলা হল, করোনা পরীক্ষা না করলে ভর্তি করা যাবে না। মৃত কিশোরের বাবার দাবি, সেখানে বেশ খানিকটা সময় কাটানোর পর তাঁর ছেলের র্যাপিড টেস্ট করার জন্য রক্ত নেওয়া হয়। সেই পরীক্ষায় করোনার অস্তিত্ব মেলে। এরপর ওই বেসরকারি নার্সিংহোম ছেলেকে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যেতে বলে। শুভ্রদীপের কথায়, সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজেও ভাইকে দীর্ঘক্ষণ বাইরে ফেলে রাখা হয়। বলা হয়, বেড ফাঁকা নেই।
ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য ভবনের সঙ্গে যোগাযোগ করেও ব্যর্থ হয় শুভ্রজিতের পরিবার। এরপর তারা পুলিসের শরণাপন্ন হয়। বেলঘরিয়া থানার উদ্যোগে শুভ্রজিৎকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিশোরের মা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, হাসপাতাল থেকে বলা হয় বেড নেই। বারবার বললাম ছেলের শরীর ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। কিছু একটা করুন। দয়া করে একটা বেডের ব্যবস্থা করে দিন। কিন্তু কিছুই করেনি। কেউ কেউ আবার এম আর বাঙ্গুরেও নিয়ে যেতে বলে। এরপর আমি হাসপাতালেই গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দিই। তারপরই হাসপাতাল
কর্তৃপক্ষ ছেলেকে ভর্তি নেয়। শনিবার সকালে ছেলের মৃত্যুর খবর আসে।
মেডিক্যাল কলেজের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, সেই সময় সত্যিই হাসপাতালে ফাঁকা বেড ছিল না। তবুও ওই কিশোরকে জরুরি বিভাগে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। চিকিৎসকরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, তাকে শেষ পর্যন্ত বাঁচানো গেল না।