কর্মপ্রার্থীরা বেশ কিছু সুযোগের সংবাদে আনন্দিত হবেন। বিদ্যার্থীরা পরিশ্রমের সুফল নিশ্চয় পাবে। ভুল সিদ্ধান্ত থেকে ... বিশদ
কারণ একটাই, ট্রামের চলনে আয়ু কমে যাচ্ছে ব্রিজের। অর্থাৎ ব্রিজ বাঁচাতে গেলে পুরোনো লাইন উপড়ে ফেলতে হবে। নতুন ব্রিজের উপরেও পাতা যাবে না ট্রাম লাইন। বিশেষজ্ঞ কমিটির নিদান এটাই। তাদের পরামর্শ মতো খুব শীঘ্রই কাজও করবে রাজ্য। তালিকায় থাকছে শিয়ালদহ, বেলগাছিয়া, কালীঘাট, অরবিন্দ সেতুসহ আরও বেশ কয়েকটি ব্রিজ। মাঝেরহাট নতুন ব্রিজের কাজ প্রায় সম্পূর্ণ। পুজোর আগেই চালু হবে। সেই ব্রিজে আর পাতা হচ্ছে না ট্রাম লাইন। কাজ শুরু টালা ব্রিজের। সেখানেও ট্রাম চলাচলে আপত্তি জানিয়েছেন ব্রিজ বিশেষজ্ঞরা। ফলত, আধুনিক কলকাতার সঙ্গে কঠিন লড়াইয়ে আর এঁটে উঠতে পারছে না ট্রাম। সেদিন হয়তো আর বেশি দূরে নেই, যে দিন আগামী প্রজন্ম তিলোত্তমার গণপরিবহণের ‘আইকন’কে চিনবে শুধু ইতিহাসের পাতায়। একদিন যেখানে সে নাম লিখিয়েছিল স্বর্ণাক্ষরে। তাই হয়তো আক্ষেপের সুরে শুক্রবার নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলছিলেন, ‘সত্যিই খুব খারাপ লাগছে। ট্রাম আমাদের কলকাতার ঐতিহ্য। অথচ, বিভিন্ন সময়ে পরিস্থিতির চাপে ট্রামের রুট কমে যাচ্ছে। কিংবা কমিয়ে ফেলতে হচ্ছে। এবারও বিশেষজ্ঞ কমিটির পরামর্শ মেনে ব্রিজের উপর থেকে ট্রাম লাইন তুলে ফেলার কাজ শুরু হবে। নতুন কোনও ব্রিজেও বসবে না ট্রাম লাইন।’
সালটা ১৮৭৩। ভারতে প্রথম ট্রাম চলাচল শুরু কলকাতায়। শিয়ালদহ থেকে আর্মেনিয়ান ঘাট। ভায়া বউবাজার স্ট্রিট, ডালহৌসি স্কোয়ার, স্ট্র্যান্ড রোড। দূরত্ব ৩.৯ কিলোমিটার।
ঘোড়ায় টানা ট্রামে চালু যাত্রী পরিবহণ। প্রথমের দিকে ঢিমেতালে চলে এই পরিষেবা। ১৮৮০ সাল। গঠিত হয় ‘ক্যালকাটা ট্রামওয়ে কোম্পানি’। তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড রিপনের হাত ধরে ট্রাম পরিষেবা গতি পায় কলকাতায়। ১৯০২ সালের ২৭ মার্চ। চালু ইলেকট্রিক ট্রাম। ধর্মতলা থেকে খিদিরপুর। ওই বছরই ১৪
জুন। ইলেকট্রিক ট্রাম চলল ধর্মতলা-কালীঘাট। তার পর থেকে ট্রাম পরিষেবায় যুক্ত হয় একের পর এক রুট। কলকাতার গণপরিবহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় ট্রাম। তথ্য বলছে, ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত শহরে ট্রাম লাইনের মোট দূরত্ব ছিল ৬৭.৫৯ কিলোমিটার। রুটের সংখ্যা ছিল ২৫টি’রও বেশি। সেটা এখন কমে দাঁড়িয়েছে সম্ভবত ছ’টিতে।
ধাক্কাটা শুরু ১৯৭৩ সালে। ওই বছর বন্ধ হয়ে যায় নিমতলা রুটে ট্রাম চলাচল। ট্রাম লাইনের দূরত্ব কমে দাঁড়ায় ৬১.২ কিলোমিটার। এর পর কলকাতায় যত ভাঙা-গড়া হয়েছে ততই কোপ পড়েছে ট্রাম পরিষেবায়। ওভার পাস তৈরি হয়েছে ট্রাম লাইন তুলে। ফ্লাইওভার নির্মাণেও টার্গেট ট্রাম। আবার মেট্রো প্রকল্পেও তোলা হয়েছে একাধিক ট্রাম লাইন। ১৯৮০ সালে মেট্রোকে স্বাগত জানাতে বন্ধ করে দেওয়া হয় বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট ও আশুতোষ মুখার্জি রোডে ট্রাম চলাচল। তারাতলা ফ্লাইওভার ছিনিয়ে নেয় মোমিনপুর-বেহালা ট্রাম রুট। গড়িয়াহাট ফ্লাইওভারের কোপে বন্ধ হয়ে যায় নোনাপুকুর-গড়িয়াহাট ট্রাম পরিষেবা। ট্রাম চলাচল ক্ষতি করছে বলে হাওড়া ব্রিজ থেকে তুলে ফেলা হয় ট্রাম লাইন। সালটা খুব সম্ভবত ১৯৯২। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পেও বিবাদী বাগ জংশনের সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় সমস্ত রুটের ট্রাম চলাচল। এবার ট্রাম লাইনের উপর সর্বশেষ কোপ ফেলল ব্রিজগুলির স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট। মাঝেরহাট ব্রিজ-বিপর্যয়েও ট্রাম চলাচল অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। শিয়ালদহ, বেলগাছিয়া, কালীঘাট কিংবা অরবিন্দ সেতুর ‘স্বাস্থ্য’ ক্ষতির পিছনে ট্রাম লাইনের দোষ দেখছে বিশেষজ্ঞ কমিটি। রাজ্যের কাছে পেশ করা রিপোর্টে তাদের পরামর্শ, ব্রিজগুলির উপর থেকে অবিলম্বে ট্রাম লাইন উপড়ে ফেলতে হবে। ইতিমধ্যেই বেলাগাছিয়া উড়ালপুল থেকে লাইন তুলে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে।