নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা। ওই দুটি জেলা থেকেই কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় সব্জির জোগান আসে সবথেকে বেশি। প্রাথমিক যে রিপোর্ট সরকারি আধিকারিকদের কাছে বৃহস্পতিবার এসেছে, সেই অনুযায়ী, দুই জেলাতে মাঠে থাকা সব্জির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফলে আগামীদিনে সরবরাহ কমলে বাজারে তার কী প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে চিন্তায় সরকারি মহল। লকডাউন চললেও খুচরো বাজারে সব্জির দাম মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরদ্বীপ সহ অন্যান্য এলাকা ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় পান একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল। পানের বরোজের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলাতেও। রাজ্যের প্রধান ধান উৎপাদক জেলাগুলির মধ্যে দুই ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুর নেই। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগে এই তিন জেলাতেই বোরো ধান অনেকটা কেটে ফেলা হয়েছিল বলে কৃষি দপ্তরের কাছে রিপোর্ট আসে। ফলে এই জেলাগুলিতে ধানের ক্ষতি কিছুটা কমানো সম্ভব হবে বলে আশা করছে কৃষি দপ্তর। তবে পূর্ব বর্ধমান সহ কয়েকটি প্রধান ধান উৎপাদক জেলায় তুলনামূলকভাবে কিছুটা বেশি ধান মাঠে ছিল। এই জেলাগুলিতে অবশ্য ঝড়-বৃষ্টি তুলনায় অনেকটাই কম হয়েছে। তবে তাতেও মাঠে থাকা ধানের কিছুটা ক্ষতি হতে পারে বলে কৃষি দপ্তরের আধিকারিকরা আশঙ্কা করছেন। দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টি হয়েছে। তাতে মাঠ থেকে কেটে নেওয়ার পর মজুত করতে গিয়েও ধানের ক্ষতি হওয়ার একটা আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। বিস্তারিত রিপোর্ট পাওয়া গেলে ক্ষতির মাত্রা বোঝা যাবে। রাজ্যে সামগ্ৰিকভাবে প্রায় ১৪ লক্ষ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়। ধান উৎপাদন হয় প্রায় ৫০ লক্ষ টন। এই দুর্যোগে গম ও তৈলবীজের ক্ষতির আশঙ্কা আছে। যে সময় ঘূর্ণিঝড়টি আছড়ে পড়ল তখন কলকাতার আশেপাশের জেলাগুলিতে চাষের মাঠ গরম কালের বিভিন্ন সব্জিতে ভরে ছিল। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মাঠে থাকা সব্জি বৃষ্টির জলের ব্যাপারে খুবই স্পর্শকাতর। কালবৈশাখীতে স্বল্প সময়ের ঝড়-বৃষ্টিতেও সব্জির ক্ষতি হয়ে যায়। আর এই ঘূর্ণিঝড়ের ঝড়-বৃষ্টি তো ব্যাপক মাত্রায় ও অনেক বেশি সময় ধরে চলেছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে যাওয়ার কারণে ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত এলাকা, বিশেষ করে দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় সব্জির কতটা ক্ষতি হয়েছে তার বিস্তারিত খবর বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত সরকারি কর্তাদের কাছে আসেনি। গ্ৰামের বেশিরভাগ হাট খোলেনি। তাই পরিস্থিতি বুঝতে আরও কিছুটা সময় লাগবে।