সায়ন্ত ভট্টাচার্য, কলকাতা: লকডাউনের শহরে করোনা ভাইরাস থেকে নাগরিকদের মুক্ত রাখতে রাস্তায় রাস্তায়, বাড়ির দেওয়ালে বা মিডিয়ন ডিভাইডারে স্প্রে করছে কলকাতা পুরসভা। লকডাউনের পর থেকে টানা কলকাতা পুর এলাকার নানা প্রান্তে চলছে এই স্প্রে’র কাজ। কিন্তু লকডাউন যদি আগামী ১৪ এপ্রিল না রদ করা হয় অথবা লকডাউন তুলে নেওয়ার পরেও যদি রাসায়নিক স্প্রে করার সিদ্ধান্ত হয়, তাহলে সেই পরিমাণ সোডিয়াম হাইপো ক্লোরাইট কি রয়েছে পুর প্রশাসনের কাছে? রাসায়নিক মজুতের বর্তমান অবস্থা নিয়ে পুরসভার অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট অনুযায়ী, আগামী ১০ দিন শুধু নয়, আগামী তিন মাস শহরের রাসায়নিক স্প্রে করার মতো কাঁচামাল মজুত রয়েছে সরবরাহকারী সংস্থার কাছে। যে কারণে অন্তত এব্যাপারে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন পুরকর্তারা।পুর কমিশনার খলিল আহমেদ বলেন, আমরা যতটা সম্ভব, গোটা কলকাতাকে রাসায়নিক স্প্রে করে জীবাণুমুক্ত করার চেষ্টা করছি। যেখানে স্প্রিঙ্কলার গাড়ি ঢুকতে পারছে না, সেখানে হ্যান্ড মিস্ট ব্লো মেশিন দিয়ে স্প্রে করা হচ্ছে। তবে আমাদের এই রাসায়নিকের মজুত নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। মেয়র ফিরহাদ হাকিম ফোনে বললেন, আমাদের তরফ থেকে সবরকম কাজ করা হচ্ছে শহরবাসীকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য। আমাদের স্প্রে’র এই অভিনবত্ব দেখে খোদ বিগ বি’ও উচ্ছ্বসিত। যা আমাদের কাছে গর্বের। ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার অসীম বসু বললেন, হয়তো আমার ওয়ার্ডে প্রতিদিন সব জায়গায় স্প্রে করা যাচ্ছে না। তবে যেখানে বাকি থাকছে, সেখানে পরের দিন করে দিচ্ছি। ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্তের কথায়, আমার ওয়ার্ডে গাড়ি সব জায়গায় পৌঁছতে পারছে না। তাই হ্যান্ড মিস্ট ব্লো মেশিন দিয়েই ওয়ার্ডের বাড়িগুলিতে স্প্রে করছি। ৮১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার জুঁই বিশ্বাস এবং ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডের দেবলীনা বিশ্বাসের বক্তব্য একই। তাঁদের আরও সংযোজন, পুরসভার এই স্প্রে’র সিদ্ধান্তে নাগরিকরা অত্যন্ত খুশি। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার অনিন্দ্য রাউত বললেন, এই স্প্রে’র সিদ্ধান্ত অনবদ্য। শহরের রাস্তা সরাসরি জীবাণুমুক্ত হচ্ছে। এটাই সবচেয়ে বড় কথা।
কলকাতা পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত প্রতিটি বরোতে দিনপিছু চারটি করে ওই রাসায়নিক ভর্তি গাড়ি যাচ্ছে। প্রতিদিন সব ওয়ার্ডের প্রতিটি কোণে কোণে না স্প্রে করা সম্ভব হলেও, যতটা সম্ভব, মূল রাস্তায় এবং হাসপাতালগুলিতে স্প্রে করা হচ্ছে। এই রাসায়নিক সরবরাহকারী সংস্থার কর্ণধার তাপসী ভট্টাচার্য বললেন, বর্তমানে দিনপিছু ৫০ মেট্রিক টন সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট পুরসভা নিচ্ছে। আমি দিনপিছু ৭০ মেট্রিক টন তৈরি করছি। তরল ক্লোরিন এবং কস্টিক সোডা মিশ্রণ করেই রাসায়নিক তৈরি করা হচ্ছে। এখন আমার কাছে যা কাঁচামাল রয়েছে, তা দিয়ে ২ হাজার মেট্রিক টন সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট তৈরি করা যাবে। যা আমি কলকাতা পুরসভা কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছি। স্বাভাবিকভাবেই তাই চিন্তা নেই বলেই জানিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। শনিবার টক টু মেয়র অনুষ্ঠানে এক নাগরিক তাঁদের সরকারি অফিসে স্প্রে করতে বলে মেয়রের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন। মেয়র তাঁকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, আমার কাছে রাসায়নিক মজুত থাকা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। কিন্তু লোকবল তেমন পাচ্ছি না। করোনা সংক্রমণের ভয়ে সীমিত পরিকাঠামো নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। সূত্রের খবর, তাপসীদেবী পুরসভাকে বলেছেন, যে পরিমাণ গাড়ি রাসায়নিক ভর্তির জন্য প্রশাসন পাঠায়, তার সংখ্যা আরও বেশি করে পাঠালে পুরসভারই সুবিধা হবে। আরও অনেক বেশি স্প্রে করতে পারবে।