পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ, কিংবা পূর্ব-পশ্চিমের চিত্রটা মোটামুটি এক। কোথাও হাতজোড় করে অনুরোধ, কোথাও আবার ‘লক্ষ্মণরেখা’ টেনে ভিড় সামলানোর চেষ্টা করেছে প্রশাসন। পাশাপাশি, অতিরিক্ত দাম নেওয়া বা কালোবাজারি আটকাতে শহরের বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালানো এবং মাইকিং করে বিক্রেতাদের সচেতন করার কাজও চলছে।কলকাতা পুলিসের পাশাপাশি বৃহস্পতিবার প্রায় তিন হাজার পুরকর্মীকে রাস্তায় নামিয়েছে কলকাতা পুরসভা। শহরের সর্বত্র ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বিভিন্ন পুর-বাজার, বিভিন্ন রেশন দোকান এবং অন্যান্য দোকানের সামনে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে গ্রাহকদের দাঁড় করানোর জন্য কোথাও গোলাকার কোথাও আবার আয়তাকার দাগ কেটে দিচ্ছেন পুরকর্মীরা।
সকাল থেকেই পথে কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। খিদিরপুর বাজারে গিয়ে সেখানকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন তিনি। সেখানে বাড়তি দাম নেওয়া হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেন মেয়র। পাশাপাশি আমজনতাকে প্রশাসনের নির্দেশ মেনে চলার জন্য অনুরোধ করেছেন তিনি। অন্যদিকে, এদিন আমর্হাস্ট স্ট্রিটে গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউটরের অফিস ও গোডাউন পরিদর্শন করেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তাঁদের কী অসুবিধা হচ্ছে, সে ব্যাপারেও খোঁজখবর নেন মন্ত্রী।
সকাল ৮টায় উল্টোডাঙায় মুচিবাজার খুলতেই ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। শাকসব্জি, মাছ-মাংস, ফুল থেকে আনাজপাতি সব দোকানের সামনেই হুড়মুড়িয়ে পড়েছেন ক্রেতারা। বাধ্য হয়ে লাঠি হাতে পথে নামে পুলিস। প্রত্যেকটি দোকানের সামনে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে কেটে দেওয়া হয় গোলাকৃতি লক্ষ্মণরেখা। ‘এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে কোনওদিন ভাবিনি। আমাদের নিজেদেরও কিছু দোষ আছে। এতবার বলার পরেও আমরা সব সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছি না। তাই পুলিস প্রশাসন যেভাবে লাইন করে দাঁড়াতে বলছে, সেভাবেই আমাদের চলা উচিত।’ জানালেন মুচিবাজারে ফুল কিনতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা চন্দন মুখোপাধ্যায়। মাছ কিনতে আসা তপন সাহার মুখেও এক কথা। প্রশাসন যা করছে, তা তো সকলের ভালোর জন্যই করছে।
শহরের অপরপ্রান্ত নিউ আলিপুর মার্কেট এবং ঘোলসাপুর বাজারের চিত্রটাও অভিন্ন। সেখানে বাজারের সবকটি গেট বন্ধ করে দিয়ে মাত্র দুটি গেট খুলে রাখা হয়েছে। পুলিস প্রশাসনের তরফে বাজারের বাইরে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে ক্রেতাদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানোর জন্য দাগ কেটে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় এক বিক্রেতার কথায়, প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, প্রত্যেকটি গেটের বাইরে ৩০ জনের বেশি যেন না থাকে। প্রত্যেকটি দোকানের সামনে দু’জনের বেশি না দাঁড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঠিক একইভাবে উত্তর শহরতলির দমদম স্টেশন সংলগ্ন বাজারে দেখা গিয়েছে প্রশাসনের সচেতনতা প্রচার। লাইন করে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে কেটে দেওয়া দাগের উপর দাঁড়িয়েই বাজার করছেন গ্রাহকরা। বাগুইআটি, সল্টলেক, কেষ্টপুর সহ বিভিন্ন বাজারে ছবিটা মোটামুটি এক।
তবে সকালের দিকে মানিকতলা বাজারে গাদাগাদি করে বাজার করতে দেখা গিয়েছে ক্রেতাদের। কম পরিসরের মধ্যে যতটা সম্ভব পুলিস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। যাঁরা মাস্ক পড়ে আসেননি, তাঁদের নাকে রুমাল বেঁধে বাজার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ঠিক তেমনই ছবি দেখা গিয়েছে ভবানীপুরের যদুবাবুর বাজারে। সেখানেও সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখার ছবি ধরা পড়েছে। যদিও শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ—সর্বত্র সামগ্রিকভাবে পুলিস তথা কলকাতা পুরসভার সক্রিয় ভূমিকা নজরে এসেছে। যেখানেই বেগতিক দেখা গিয়েছে, সেখানেই শক্ত হাতে পরিস্থিতি সামলেছে প্রশাসন।
উল্লেখ্য, লকডাউন হওয়ার পর থেকেই শহর, শহরতলি এমনকী জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিক্ষিপ্তভাবে পুলিসের বিরুদ্ধে অতি সক্রিয়তার অভিযোগ আসছিল। কোথাও কোথাও কোনও কিছু না জেনেই পুলিসের লাঠিচার্জ করার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিসকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তারপর এদিন সকাল থেকেই লাঠিচার্জের বদলে অনেকটা ‘নরম’ ভূমিকা নেয় প্রশাসন।