পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
হাওড়ার জুজারশা এলাকার একব্বরপুরের বাসিন্দা বিধবা করুণাদেবীর একমাত্র ভরসা ছিল ওই মেয়ে। ১৯৯৮ সালে কাকলিদেবী হাওড়ার দাশনগর থানা এলাকার সাহানপুর নেতাজি সুভাষ হাইস্কুলে ভূগোলের শিক্ষিকা হন। অভাবের সংসারে আসে স্বাচ্ছল্য। কিন্তু, ২০১১ সালের ৭ এপ্রিল এক মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় আচমকা তাঁর মৃত্যু হয়। সত্তরোর্ধ করুণাদেবীর জীবনে স্বামীর মৃত্যুর পর আরও একবার অন্ধকার ঘনিয়ে আসে। আত্মীয়স্বজনের সাহায্য নিয়ে রাজ্য স্কুল শিক্ষা দপ্তরে গিয়ে তিনি মেয়ের অকালমৃত্যুর জেরে প্রাপ্য অর্থ ও পেনশন পাওয়ার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু, সেই আবেদনে সাড়া মেলেনি। অনাহারে, অর্ধাহারে দিন কাটানো বৃদ্ধা শেষ পর্যন্ত পরিজনের উদ্যোগেই রাজ্যের শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন। ২০১৫ সালে হাইকোর্ট তার রায়ে অবিলম্বে তাঁর প্রাপ্য মিটিয়ে পেনশন চালু করার জন্য হাওড়ার জেলা স্কুল পরিদর্শককে নির্দেশ দেয়।
এরপরই তাঁকে চমকে দেয় জেলা স্কুল পরিদর্শকের অফিস। তাঁকে জানানো হয়, তাঁর মেয়ে বিবাহিত ছিলেন। কে তাঁর স্বামী? সেই তথ্যও তাঁকে দেওয়া হয়। তাঁর নাম প্রবীর জানা। এবার চমকের পাশাপাশি তাঁর চোখ কপালে ওঠার উপক্রম। কারণ, এই প্রবীরবাবু তাঁরই বোন আলপনার স্বামী। অর্থাৎ সম্পর্কে প্রবীরবাবু হলেন কাকলির মেসোমশাই। বৃদ্ধা ছোটেন গ্রাম পঞ্চায়েত, জেলাশাসক ও বিডিও অফিসে। সব জায়গা থেকেই লিখিতভাবে জানানো হয়, কাকলিদেবী ছিলেন অবিবাহিতা। এমনকী জেলাশাসক ২০১৮ সালের ২৪ মে জেলা স্কুল পরিদর্শককে সাফ জানান, কাকলি পাঁজার একমাত্র উত্তরাধিকারী হলেন তাঁর মা করুণাদেবী। কিন্তু, সেই তথ্যকেও গুরুত্ব দেয়নি জেলা স্কুল পরিদর্শকের অফিস বা রাজ্য স্কুল শিক্ষা দপ্তর। ফলে আবারও অশক্ত শরীরে করুণাদেবী হাইকোর্টের দরজায় কড়া নাড়েন।
তাঁর আইনজীবী আশিস চৌধুরী আদালতকে জানান, ২০০৯ সালে কাকলি পাঁজা উচ্চ হারে বেতন পাওয়ার দাবি নিয়ে হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় তাঁর মেসোমশাই তদ্বিরকার হয়েছিলেন। কিন্তু, সেই সম্পর্কটি উল্লেখ করার সময় ত্রুটি ছিল। কিন্তু, সেই মামলা কবে মিটে গিয়েছে। কিন্তু, করুণাদেবীর মেয়ে যে অবিবাহিত ছিলেন, তাঁর মা-ই যে একমাত্র উত্তরাধিকারী, তা প্রশাসন দ্ব্যর্থহীনভাবে জানানোর পরেও সেই ভুলকে আঁকড়ে ধরে স্কুল শিক্ষা দপ্তর বা জেলা স্কুল পরিদর্শকের অফিস যা করছে, তা চূড়ান্ত অমানবিক, অন্যায়। এই সওয়ালকে মান্যতা দিয়েই আদালত ওই নির্দেশ দিয়েছে।