রাজনীতিক ও পেশাদারদের ব্যস্ততা বাড়বে। বয়স্করা শরীর স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিন। ধনযোগ আছে। ... বিশদ
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নিউ বারাকপুর পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কোদালিয়ার রামমোহন সরণীর বাসিন্দা সুকর্ণ সরকার। তিনি উল্টোডাঙা সল্টলেক রুটে অন্যের অটো চালান। স্ত্রী তন্দ্রা সরকার গৃহবধূ। একমাত্র ছেলে তীর্থঙ্কর কোদালিয়া হাইস্কুলের ছাত্র। মেয়ে ঐশী পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী। এবার তীর্থঙ্করের পরীক্ষা পড়েছে নিউ বারাকপুরের সতীন সেন নগর হাইস্কুলে।
স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মাত্র তিন বছর বয়সে স্পাইনাল কর্ডে টিউমার ধরা পড়ে। শরীরে প্রথম বড় অস্ত্রোপচারের ধকল ওই বয়সেই সামাল দেয় তীর্থঙ্কর। এরপর পরিবারের সকলে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেও পরের বছর থেকে নানান অসুস্থতা শুরু হয়। পাড়ার মাঠে যখন তার সব বন্ধুরা দাপিয়ে বেরিয়েছে, স্কুল ক্যাম্পাসে সকলে যখন আড্ডা ও খুনসুটিতে মশগুল, তখন সে বাড়ির বিছানায় শুয়ে যন্ত্রণায় কাতর ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়েছে। ২০১৪ সালে ভেলোরে কিডনির সমস্যা ধরা পড়ে। সেখানেও অপারেশন করে ক্যাথিটার লাগানো হয়। ২০১৯ সালে শারীরিক অসুস্থতা বাড়ায় একাধিক পরীক্ষার পর পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন তাঁর দুটি কিডনি বিকল হয়ে গিয়েছে।
এরপর থেকে প্রতি সপ্তাহের সোমবার বিকেল ৪টায় ও বৃহস্পতিবার ভোর ৬টায় তার ডায়ালিসিস করতে হয়। এছাড়া প্রত্যেক মাসে নিতে হয় আয়রন ও হিমোগ্লোবিনের ইঞ্জেকশন। মাধ্যমিক পরীক্ষার আগের দিন ডায়ালিসিস করে রাত সাড়ে ১১টায় সে বাড়ি ফেরে। পরের দিন মাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষা দিতে যায়। আজ, বৃহস্পতিবার সকালে ডায়ালিসিসের কথা থাকলেও পরীক্ষার কারণে চিকিৎসক বিকেল ৪টায় টাইম দিয়েছেন। পরীক্ষা কেন্দ্রে সুকর্ণ যখন পরীক্ষা দেয়, তখন বাইরে ওষুধ হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় পরিবারের সদস্যদের। কারণ, কখন যে অসুস্থ হবে তার কোনও ঠিক নেই।
সুকর্ণবাবু বলেন, আমার নিজের দুটি অটো ছিল। ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে দুটিই বিক্রি করতে হয়েছে। এখন অন্যের অটো চালাই। তাতেও আমার কোনও কষ্ট নেই। শুধু ছেলেকে সুস্থ করে তোলাটাই আমার লক্ষ্য। ওকে আমরা এত সমস্যার পর পড়াশুনা করতে বারণ করেছিলাম। কিন্তু, ও কথা শুনতে চায় না। একটু সুস্থ হলেই স্কুল ও কোচিং সেন্টারে দৌড়ে যায়। মা তন্দ্রাদেবী বলেন, ওর মনের জোর মারাত্মক। একটু সুস্থ থাকলে বই টেনে নিয়ে পড়তে বসে। ওর পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে আমরা চিন্তিত নই। ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি ও যেন সুস্থভাবে পরীক্ষাগুলো দিতে পারে। কারণ, মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়াটাই ওর স্বপ্ন। আমি নিজের একটি কিডনি ওকে দিতে চাই। কিন্তু, কিডনি দিতে গেলেও পরীক্ষার নিরীক্ষার খরচ নাকি ৭০ হাজার টাকা! আমরা সমস্ত দিক থেকে ছেলেকে সারিয়ে তোলার মরিয়া চেষ্টা করছি।