দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় ও ব্যবসা থেকে অর্থাগম যোগ। প্রেমের প্রস্তাব পেতে পারেন। পুজো পাঠে মন। ... বিশদ
এই দীর্ঘ বছরগুলিতে মধ্যবিত্ত সংসার আর তিনটি ছোট ছোট দোকানের মালিক সুভাষচন্দ্রবাবু মেয়ের চিকিৎসার খরচ তুলতে একে একে বেচে দিয়েছেন তাঁর একটি মুদির দোকান ও একটি পাবলিক বুথ। চিকিৎসার টাকা জোগাড়ে জলপাইগুড়ির ভক্তিনগরে বাড়ির সামনে একটি ছোট্ট স্টেশনারি দোকানও প্রোমোটারকে দিতে বাধ্য হয়েছেন। মধ্যবিত্ত থেকে কখন নিম্নবিত্ত হয়ে গিয়েছেন, লড়তে লড়তে তাও বোঝেননি।
বুধবার দুপুরে মুকুন্দপুরের ঘরে দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে পাশে নিয়ে বললেন, ‘বড় মেয়ে যখন মাধ্যমিক দেয়, সেই সময় থেকেই হাসপাতাল আর ডাক্তারখানা ঘরবাড়ি হয়ে গিয়েছিল। তখন থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ছ’-সাতবার কিডনির রোগে ওকে ভর্তি করেছি হাসপাতালে। কখনও কলকাতা, কখনও উত্তরবঙ্গ, কখনও চেন্নাইয়ে। টাকা বেরিয়েছে জলের মতো। দুশ্চিন্তায় বাধিয়েছি হার্টের অসুখ। দু’বছর আগে হয়েছে বাইপাস সার্জারি’।
যাকে নিয়ে এই কাহিনী, তাঁর নাম উত্তরা শিকদার। বয়স ৩১। কিডনির দুরারোগ্য অসুখে আক্রান্ত উত্তরার প্রথমবার কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছিল ২০১১ সালের ১৯ আগস্ট। সেবার ‘ও পজিটিভ’ উত্তরাকে বাঁচাতে কিডনি দেন মা কৃষ্ণা শিকদার। কলকাতায় ইএম বাইপাস লাগোয়া একটি প্রাইভেট হাসপাতালে প্রতিস্থাপন, ওষুধ, থাকার ঘরভাড়া, ডায়ালিসিস সব মিলিয়ে ১১ লক্ষ টাকা বেরিয়ে যায়। সেই টাকা জোগাড় হয়েছিল সুভাষচন্দ্রবাবুর দোকান ও বুথ বেচে।
মায়ের কিডনির স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ১৪ মাস! সুস্থ হয়েছেন ভেবে জরুরি ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে অর্থের জোগানে বাড়ির কাছে বিদ্যাজ্যোতি প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন উত্তরা। ফের ক্রনিক কিডনি ডিজিজ জোরালো থাবা বসায়। প্রথমে ওষুধ, তারপর ডায়ালিসিস, এভাবে বছর চার ঠেকনা দিয়ে চলে। এরপর কোনওক্রমে টাকা-পয়সা জোগাড় করে বাবা যখন ২০১৭ সালে কলকাতার একটি নামজাদা হাসপাতালে মেয়েকে বাঁচাতে কিডনি দিতে যান, অপারেশনের আগের মুহূর্তে ডাক্তাররা তাঁর বাইপাস সার্জারি হয়েছে শুনে বেঁকে বসেন।
পরের সত্যিগুলিও গল্পের মতো। গত বছর ‘দিদিকে বলো’তে ফোন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে সাহস করে বাবা-মা’র চলে যাওয়া, পিজিতে ভর্তি এবং এই ক’দিন আগে ২৪ জানুয়ারি ইউরোলজির প্রধান ডাঃ দিলীপ পাল ও তাঁর টিমের নেতৃত্বে বাবার কিডনি মেয়ের শরীরে প্রতিস্থাপন। ট্রান্সপ্লান্ট টিমের অন্যতম সদস্য অ্যানাস্থেসিওলজিস্ট ডাঃ সুজাতা ঘোষ বলেন, আমরা কী-ই বা করেছি। যা করার করছে ওঁর পরিবার। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, যে কারও কাছে উদাহরণ হতে পারে মেয়েটির লড়াই। সরকারের তরফ থেকে ওকে কুর্নিশ জানাই। পাল্টা ধন্যবাদ জানাতে ভোলেনি এই পরিবারও। ছলছলে চোখে কৃষ্ণাদেবী বললেন, ‘দিদি’কে কয়েক কোটি ধন্যবাদ। পিজিতে উত্তরার কিডনি প্রতিস্থাপনে পাঁচ পয়সাও লাগেনি।
তখন দুপুর সাড়ে তিনটে। মুখে মাস্ক বাঁধা উত্তরাকে নিয়ে সতর্ক পায়ে মুকুন্দপুরের বাড়ির চৌকাঠ পেরিয়ে ঘরে ঢুকলেন বোন উত্তমা। সদ্য ছুটি পেয়েছেন কে বলবে! মুখে যে কথার খই! কবে স্কুলে যোগ দেবেন, তর সইছে না মেয়ের। লড়তে লড়তে যে এসএসসি দিয়ে রাজাডাঙ্গা পি এম হাইস্কুলে শিক্ষিকার চাকরিও পেয়েছেন এই ‘ধন্যি মেয়ে’!