বিএনএ, চুঁচুড়া: শিক্ষার্থী বোঝাই পুলকার দুর্ঘটনা নিয়ে তোলপাড়ের মাঝেই সোমবার রিষড়ার অভিভাবকরা এক পুলকার চালককে ধরে পুলিসের হাতে তুলে দিলেন। অভিভাবকদের অভিযোগ, ওই পুলকার চালকের কাছে গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পর্যন্ত ছিল না। পাশাপাশি গাড়িটিও খুব ভালো অবস্থায় নেই বলেই তাঁদের মনে হয়েছিল। এদিন এনিয়ে উত্তেজনার মধ্যেই খবর পেয়ে রিষড়া থানার পুলিস ঘটনাস্থলে এসে ওই চালককে আটক করে নিয়ে যায়। এই ঘটনাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ বিভাগ। বিভাগীয় কর্তাদের দাবি, এভাবে অভিভাবকরা সতর্ক হলেই অনেকাংশে সমস্যা এড়ানো সম্ভব।
এদিকে, পুলকার দুর্ঘটনার জেরে সোমবার চন্দননগর কমিশনারেটের একাংশের পুলকার চালকদের ডেকে সচেতনতার পাঠ দিল কমিশনারেটের ট্রাফিক বিভাগ। এডিসিপি ট্রাফিক হারাধন হালদার উপস্থিত থেকে পুলকার চালকদের কী করা উচিত এবং উচিত নয় সেই নির্দেশিকা দেন। জানা গিয়েছে, গাড়ির ফিট রাখার পাশাপাশি চালকরাও গাড়ি চালানোর মতো অবস্থায় আছে কি না নিশ্চিত করা, গাড়ির গতিবেগ নিয়ন্ত্রণ করা সহ একাধিক বিষয়ে ওই চালকদের সতর্ক করা হয়েছে। ট্রাফিক কর্তারা জানিয়েছেন, পুলকারগুলিকে বিশেষভাবে নজরে রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
রিষড়া থানার পুলিস জানিয়েছে, গাড়িটিও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই ঘটনার অন্যতম অভিযোগকারী অভিভাবক প্রিয়া দত্ত বলেন, আমাদের বাচ্চারা রিষড়ারই একটি বেসরকারি স্কুলে পড়ে। এদিন পুলকার নিয়ে চালক এলে আমরা তাঁর লাইসেন্স সহ গাড়ি নিয়ে প্রশ্ন করি। তাতেই সবকিছু প্রকাশ্যে চলে আসে। চালক মাত্র দু’মাস আগে গাড়ি চালানো শিখেছে। তার নিজস্ব লাইসেন্সও নেই। আবার গাড়ির চেহারা দেখেও মনে হয়নি সেইটি ফিট। এসব কারণেই আমরা বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাইনি। ওই চালককেও পুলিসের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক সোমনাথ চক্রবর্তী ওই ঘটনার প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, আইনি উদ্যোগ অপেক্ষা সচেতনতা অনেক বড় হাতিয়ার। রিষড়ার ওই অভিভাবকরা একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এভাবেই অভিভাবক মহল সতর্ক হলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়। আমরাও অভিভাবকদের কাছে সতর্কতার আর্জি জানাব।
এদিকে, এডিসিপি ট্রাফিক হারাধনবাবু বলেন, পুলকার চালকদের ডেকে সতর্ক করা হয়েছে। তাঁদের কি নিয়ম মানতে হবে সেসব জানানো হয়েছে। সাতজনের বেশি কোনওভাবেই রাখা যাবে না। আমরা ধারাবাহিকভাবে পুলকার নিয়ে বিশেষ নজরদারি চালাব। আইন মানা হচ্ছে কি না তা দেখা হবে। আরও কিছু সচেতনতা কর্মসূচি চালানো হবে বলেও ট্রাফিক কর্তারা জানিয়েছেন।
গত শুক্রবার পোলবাতে পুলকার দুর্ঘটনায় ১৩ জন জখম হয়েছিল। গাড়ির প্রবল গতিতে চলার কারণেই সামনের একটি লরি আচমকা গতিমুখ পরিবর্তন করায় ছাত্রবোঝাই গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারায়। সেই দুর্ঘটনায় চালক সহ তিন খুদে পড়ুয়া এখনও চিকিৎসাধীন। ওই ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে যেখানে প্রশ্ন উঠছে সেখানেই রিষড়ার অভিভাবকদের ভূমিকা আশার আলো দেখাচ্ছে, এমনটাই ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে।