পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
পাঁচুবাবুর আগেই দাঁড়িয়ে আছেন আর এক বৃদ্ধ কাশেম মণ্ডল। বাড়ি দেগঙ্গা। ভোর ছ’টায় বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন। হার্টের অসুখে ভুগছেন বৃদ্ধ। লম্বা লাইন নিয়ে তিতিবিরক্ত কাশেম সাহেব বললেন, ওষুধ ফ্রিতে পাচ্ছি মানে কী এই বৃদ্ধ বয়সে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে? ক’টা মাত্র কাউন্টার। আমাদের মতো বুড়ো মানুষদের জন্য কি মায়া-দয়া নেই হাসপাতালের?
মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর থেকে হার্টের ডাক্তার দেখাতে মেডিক্যালে এসেছিলেন শহিদুল শেখ। একই সুরে ক্ষোভ উগড়ে দিলেন শহিদুলও। বললেন, হাসপাতালে এত কিছু হয়েছে। এখন আগের থেকে কত সাফসুতরোও থাকে। কিন্তু ভোগান্তি না কমালে কীসের উন্নতি? সেই কখন থেকে ওষুধ নেওয়ার লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। লাইন এগতেই চাইছে না। এগবে কী করে? এত রোগী, তিনটি কাউন্টারে সামাল দেওয়া যায়?
যে কোনওদিন দুপুর দুটো-আড়াইটে নাগাদও মেডিক্যালের এই ওষুধ নেওয়ার সর্পিল লাইন দেখলে যে কেউ ভাবতেই পারেন—এ বুঝি বিকেলের কোনও বিশেষ আউটডোরে ডাক্তার দেখানোর লাইন! কিন্তু, কেন এত লম্বা লাইন? বিশেষ করে যেখানে স্বাস্থ্যভবন বারবার পরিষেবা আরও সহজে ও অল্প সময়ে পৌঁছে দেওয়ার উপর জোর দিচ্ছে?
ফার্মাসিতে গিয়ে দেখা গেল, তিনজন মহিলা ফার্মাসিস্ট ঝড়ের গতিতে ওষুধ দিচ্ছেন। কোনও খামতি বা গাফিলতি নেই। কিন্তু গোড়াতেই যে গলদ! হাজার হাজার রোগীর জন্য কাউন্টার খোলা রয়েছে মাত্র তিনটি। যেখানে অন্তত তার দ্বিগুণ কাউন্টার খোলার ব্যবস্থা করাই আছে স্টোরেই। কিন্তু, লোক কোথায়?
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকল্প মতো সব ওষুধই বিনামূল্যে দেওয়া হয়। দু’টি জায়গা থেকে দামি-কমদামি সব ধরনের ওষুধ নিখরচায় দেওয়া হয়। একটি হল তিন নম্বর গেট লাগোয়া মেন আউটডোর বাড়ির দোতলার কাউন্টারগুলি। অন্যটি হল এই এমসিএইচ বাড়ির পাশের ফার্মাসি স্টোর।
যে কোনওদিন আউটডোর বাড়ির ওষুধ দেওয়ার লাইনগুলি দেখলেও ভিড়মি খেতে হবে। কম কাউন্টার, বেশি চাপের জন্য সেগুলিও রোজ দোতলা থেকে এঁকেবেঁকে একতলায় নেমে চারদিকে পরিভ্রমণ করতে থাকে।
সূত্রের খবর, ৫২ জন ফার্মাসিস্ট পদে অনুমোদন রয়েছে মেডিক্যালে। নিযুক্ত ৪৩ জন। নেহাত কম নয়। তা সত্ত্বেও কেন এই অবস্থা? কেউ বলছেন, সব ফ্রি করে দেওয়ার পর গত দু’তিন বছরে ওষুধ নেওয়ার যা চাপ বেড়েছে, তাতে ৪৩ জনও যথেষ্ট নয়। তাছাড়া তিনটে শিফট আছে, ছুটিছাটা, শরীর খারাপ, অবসরও লেগে আছে। অপর অংশের যুক্তি, স্টোরে আগুন লাগার ঘটনার পর থেকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর পর এখনও ঠিক গুছিয়ে ওঠা যায়নি। মেডিক্যালের সুপার ডাঃ ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, লোকাভাবে বেশি কাউন্টার খোলা যাচ্ছে না। আমরা বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত। স্বাস্থ্যভবনেও জানানো হয়েছে।