কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
নৈহাটির সাহেব কলোনি মোড়ের বাসিন্দা ৭৪ বছর বয়সি ভূষণবাবু মানসিক ভারসাম্যহীন। উচ্চশিক্ষিত হওয়ায় একাধিক সংস্থায় চাকরি করেছেন। তিনটে চাকরি ছেড়েছেন তিনি। শেষ টাটা কোম্পানিতে চাকরি করতেন। তাঁর স্ত্রী, এক ছেলে রয়েছেন। ছেলে বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। মাকে নিয়ে থাকেন মেদিনীপুরে। বৃদ্ধ সাহেব কলোনির বাড়িতে ভাইপো-ভাইঝির সঙ্গে থাকেন। ভাইপো প্রদীপ পাল বারাকপুরে পুলিসে কর্মরত।
ভূষণবাবু প্রায়শই বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যেতেন। আবার কিছুদিন পরে নিজেই বাড়ি ফিরে আসতেন। গত ১০ নভেম্বর নিখোঁজ হয়ে যান তিনি। একমাস পরেও বাড়ি না ফেরায় ১০ ডিসেম্বর নৈহাটি থানায় বাড়ির লোকজন নিখোঁজ ডায়েরি করেন। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১২ ডিসেম্বর নৈহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালে কেউ বা কারা রাস্তা থেকে তুলে এনে এক অজ্ঞাতপরিচয় এক বৃদ্ধকে ভর্তি করেন। ৭ জানুয়ারি ওই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। হাসপাতাল থেকে বৃদ্ধের খবর দেওয়া হয়েছিল নৈহাটি থানায়। নৈহাটি থানার পুলিস মৃতের ছবি দেখে ভূষণ পালের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ভাইপো প্রদীপ, ছেলে ভাস্কর ও প্রতিবেশীরা গিয়ে পায়ের একটি বড় আঙুল দেখে দেহ শনান্ত করেন। মুখেরও হুবহু মিল ছিল। ওই দিনই মৃতদেহ বাড়িতে নিয়ে এসে নৈহাটির রামঘাট শ্মশানে দাহ করা হয়। ১১ দিনের মাথায় নিয়মরীতি মেনে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করেন পরিবারের লোকজন। শ্রাদ্ধে আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সকলেই নিমন্ত্রিত ছিলেন। পেট পুরে শ্রাদ্ধের ভোজ খান সকলে।
শুক্রবার ভালোবাসার দিনে ‘ভালোবাসা’র টানে দুপুর আড়াইটে নাগাদ বাড়ির দরজায় কড়া নাড়েন ‘মৃত’ ভূষণ পাল। ভাইঝি গীতা পাল বললেন, কাকাকে দেখে অবাক হয়ে যাই। সন্দেহ হয়েছিল, অন্য কেউ না তো? তারপর আমার নাম ধরে ডাকল। একই স্বর, একই চোখ মুখ। খবর পেয়ে পাড়ার লোকজনও এল। ওরাও দেখে চমকে যায়। প্রতিবেশী সঙ্গীতা ভট্টাচার্য বলেন, সিনেমায়, টিভিতে এমন গল্প দেখেছি। বাস্তবে এমনও যে ঘটনা ঘটে, এই প্রথম অভিজ্ঞতা। প্রথমে মনে হয়েছিল, মৃত লোক আবার কী করে ফিরে আসবে! পরে জানলাম, যেটা সৎকার করা হয়েছিল, সেটা অন্য কেউ।
সাহেব কলোনি মোড়ের চায়ের দোকানদার সুমিত দাস বলেন, শ্রাদ্ধের খাবার খেয়েছি। সেই লোকটাই আবার ফিরে এল! এ এক অদ্ভুত কাণ্ড। শুধু ওর ছেলে, ভাইপো শুধু নয়, প্রতিবেশী এক ওষুধ দোকানদারও হাসপাতালে গিয়ে দেহ শনাক্তকরণ করেছিলেন। এখন বোঝা যাচ্ছে, ওঁদেরই ভুল ছিল। নৈহাটি থানার পুলিস জানিয়েছে, হাসপাতালে যিনি মারা গিয়েছিলেন, তাঁর ছবি তোলা আছে। এবার ওই ছবি দিয়ে প্রতিটি থানায় তথ্য পাঠানো হবে।
শনিবার সকালে নিজের ঘরে চুপচাপ বসে ছিলেন ভূষণ পাল। অনেক ডাকাডাকির পর বেরিয়ে এলেন। দরজার সামনে বসলেন। কোথায় গিয়েছিলেন? প্রশ্ন শুনে চুপ রইলেন কিছুক্ষণ। তারপর নিজের মনেই ইংরেজি বাক্য আওড়ালেন। একটু পরে বললেন, আমায় খেতে দাও।