পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
শুনানির দিন থাকলেই সকাল সকাল উঠে স্বামীকে আদালতে যাওয়ার জন্যে তৈরি করে দিতেন প্রমিতাদেবী। এদিনও ব্যতিক্রম হয়নি। তবে উৎকণ্ঠা যে অন্যদিনের থেকে অনেক বেশি ছিল তাও গোপন ছিল না। প্রমিতাদেবী বলেন, কী যে কষ্ট বুকে চেপে রেখেছি, তা শুধু সন্তানহারা মায়ের পক্ষেই বোঝা সম্ভব। মেয়েটাতো আর ফিরবে না। অন্তত ওর আত্মা যদি শান্তি পায়, সেটুকুই স্বান্তনা। আর ভালো লাগছে একজন বাবা জীবনপণ করে যে লড়াই লড়েছেন তার স্বার্থকতা এসেছে। ওনার কষ্টটাও তো কম ছিল না।
স্বার্থকতার প্রশ্নেই খুশি মামলার তদন্তকারী অফিসার সোমনাথ দে। একদা বলাগড়ে থাকলেও বর্তমানে চলে গিয়েছেন জাঙ্গিপাড়ার ওসি হয়ে। কিন্তু আদালতের প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রমাণ সরবরাহে চেষ্টার ত্রুটি করেননি কখনও। প্রায় পিতৃতূল্য স্নেহে একটা মেয়েকে ন্যায় দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। সোমনাথবাবু বলেন, বহু লড়াই ছিল। শেষপর্যন্ত মেয়েটা কাঙ্ক্ষিত ন্যায় পেয়েছে, এটাই আনন্দের। বিচার ব্যবস্থার উপরে ভরসা আরও অটুট হবে এই রায়ে। এদিন আদালতে যেতে পারেননি। কিন্তু স্কুলে থেকেও নিয়মিত খোঁজ নিয়েছেন পলি ধর। বলাগড়ের ওই ছাত্রী যে বেসরকারি স্কুলে পড়ত, সেই স্কুলের দিদিমণি আগে শুনানি থাকলেই আদালতে যেতেন। পলিদেবী বলেন, কী বিভিষিকা ছিল সেই সময়টা বলে বোঝাতে পারব না। একটা নাবালিকার সঙ্গে এই নারকীয় অত্যাচার হতে পারে, ভাবতেই পারতাম না। রায়ে কোনও ভুল নেই। সমাজে এখনও যেসব নরপিশাচ আছে, তাদের কাছে এই রায় দৃষ্টান্ত হবে। ও খুব শান্ত স্বভাবের একটা ভালো মেয়ে ছিল। ওই ঘটনার পর থেকে ওর নামে আমরা একটা স্কলারশিপ দিই। প্রতিবেশী থেকে গ্রামবাসীদের মধ্যেও গত ছ’বছর ধরে যন্ত্রণার স্রোত ছিল। নিয়ম করে এই মামলায় তাঁরা আদালতে আসতেন। এদিনও এসেছিলেন স্থানীয় ব্যবসায়ী মৃত্যুঞ্জয় অধিকারী, জয়দেব দাসরা। মৃত্যুঞ্জয়বাবুর বাড়ির কাছের ওই নার্সারিতেই সেই রাতে স্কুলছাত্রীটিকে আটকে রেখেছিল খুনিরা। এখনও সেই ব্যথা স্মরণ করে দুঃখ পান তিনি। বলেন, সেদিন ভাবতেও পারিনি মেয়েটা ওখানে থাকতে পারে। যখন রায় শুনলাম, মনে হল কী যেন একটা বোঝা বুক থেকে নেমে গেল। মেয়েটা ন্যায় পেল, এর থেকে বেশি আর কী চাইতে পারি! খুশি প্রতিবেশী সন্তোষ দাসও। বলেন, আমরা ফাঁসিই চেয়েছিলাম। সেটাই পেয়েছি। মেয়েটা নেই, ব্যথা আছে। এই রায় সেখানে কিছুটা শান্তি এনে দিচ্ছে।