বিএনএ, বারাকপুর: কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সহ উপাচার্যের প্রকাশ্যে বাগবিতণ্ডা! শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে এই দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে যান সকলে। কথা কাটাকাটির পর সহ উপাচার্য গৌতম পাল উপাচার্যের ঘরের সামনে অবস্থানে বসেন। কিছুক্ষণ পর তিনি ‘অসুস্থ’ বোধ করেন। এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে শিক্ষামহলে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, এক মহিলা কর্মীকে মানসিক অত্যাচারের অভিযোগ পেয়ে রেজিস্ট্রারকে ছুটিতে পাঠিয়ে ছিলেন উপাচার্য। দুই দিন পরেই রেজিস্ট্রারকে পুনর্বহালের নির্দেশিকা জারি করেন সহ উপাচার্য। যা নিয়ে উপাচার্য ও সহ উপাচার্যের সংঘাত প্রকাশ্যে আসে।
২০১৯ সালের প্রথম দিকে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ করা হয় ফিজিওলজি বিভাগের প্রাক্তন ডিন গৌতম পালকে। ফিজিওলজি বিভাগেই সহ উপাচার্যের দপ্তর বানিয়ে দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে। সূত্রের খবর, গৌতমবাবু শাসক দলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। সহ উপাচার্যের দায়িত্ব পেয়েই তিনি সমান্তরাল প্রশাসন চালানোর চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। এর ফলে উপাচার্যের সঙ্গে সহ উপচার্যের সংঘাত বাধতে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক দিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবাংশু রায়ের বিরুদ্ধে এক মহিলা সহকর্মীকে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। উপাচার্যের ঘরে এসে মহিলা কর্মী কান্নাকাটি করেন।
ওই অভিযোগ পেয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন উপাচার্য। গত ১৭ জানুয়ারি রেজিস্ট্রার দেবাংশুবাবুকে ছুটিতে পাঠান উপাচার্য। ২০ জানুয়ারি সহ উপাচার্য দেবাংশুবাবুকে রেজিস্ট্রার পদে পুনর্বহালের নির্দেশিকা জারি করেন। সেই চিঠি অবশ্য প্রকাশ্যে আসে ২১ জানুয়ারি সন্ধ্যায়। উপাচার্য যদিও ২০ জানুয়ারি ‘অন ডিউটি’তে ছিলেন। সহ উপাচার্যের এই নির্দেশিকাতে ক্ষুব্ধ হন উপাচার্য। কেন তিনি রেজিস্ট্রারকে পুনর্বহালের নির্দেশিকা জারি করেছেন, তা জানতে শোকজ করেন উপাচার্য। সাত দিনের মধ্যে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়। সূত্রে জানা গিয়েছে, উপাচার্যের বর্তমানে সহ উপাচার্যের কোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকে না।
শুক্রবার দুপুর ১টা নাগাদ প্রশাসনিক ভবনে সহ উপাচার্য উপাচার্যের সামনে এসে নিজস্ব অফিস ঘরের দাবি করেন। এবং তা প্রশাসনিক ভবনেই দিতে হবে বলে জানান। এ নিয়ে বাগবিতণ্ডা বাধে উপাচার্য ও সহ উপাচার্যের। সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য আধিকারিক ও কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সামনেই দু’জনের তীব্র চিৎকারে কথা কাটাকাটি হয়। এরপরই উপাচার্যের ঘরের সামনে অবস্থানে বসেন সহ উপাচার্য। বিকেল তিনটে নাগাদ তিনি ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়েরই চিকিৎসক এসে তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসা করেন। সহ উপাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, আমি মিডিয়ার সঙ্গে কোনও কথা বলব না। রেজিস্ট্রারকে পুনর্বহালের প্রশ্নে তিনি বলেন, আমার ক্ষমতা অনুযায়ী করেছি। আইনের বাইরে কিছু করিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শঙ্করকুমার ঘোষ বলেন, আমাকে না জানিয়ে রেজিস্ট্রারকে পুনর্বহালের নির্দেশিকা দিয়েছেন সহ উপাচার্য। তাই তাঁকে শোকজ করা হয়েছে।