নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সামনেই নেতাজি জয়ন্তী, সাধারণতন্ত্র দিবস ও সরস্বতী পুজো। আর এসব অনুষ্ঠান নিয়েই ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন জেলবন্দি দেবযানী মুখোপাধ্যায়। যিনি সারদা’য় অন্যতম অভিযুক্ত। আগে বেশ কিছুদিন তিনি ছিলেন প্রেসিডেন্সি মহিলা সংশোধনাগারে। এখন তাঁর ঠিকানা দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার। সেখানেই তিনি তাঁর সামাজিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে জেলের মহিলাদের কাছে ক্রমশ ‘নয়নের মণি’ হয়ে উঠছেন। ফলে জেলের কর্মী থেকে বন্দি সকলের কাছেই তিনি এখন পরিচিত ‘দেবযানী ম্যাডাম’ বলে।
ফি বছরই এই বিশেষ বিশেষ দিনে বিভিন্ন জেলে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। তাতে বন্দিরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে থাকেন। তবে প্রেসিডেন্সি থেকে দমদম জেলে এসে প্রতিটি অনুষ্ঠানেই সরাসরি অংশ নেন দেবযানী। শুধু অংশ নেওয়াই নয়, অন্য মহিলা বন্দিরাও যাতে প্রতিটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেন, সেই বিষয়ে সব সময় সজাগ থাকেন এই ‘ম্যাডাম’। সেই কারণে নেতাজি জয়ন্তী, বাগদেবীর আরাধনা যতই এগিয়ে আসছে, ততই তাঁর ব্যস্ততা উঠেছে তুঙ্গে। অন্যান্যবারের মতো এবারও জেলে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছে সঙ্গীত, নৃত্য, ব্রতচারী, আবৃত্তি, যেমন খুশি সাঁজো, অঙ্কন, নাটক, যাত্রা প্রভৃতি। অনুষ্ঠানে কে কী করবেন, তার একটি পরিকল্পনাও আগে থেকে তৈরি হয়ে যায়। এরপরই শুরু হয়ে যায় মহড়া। আর সেই কাজে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করে থাকেন ‘দেবযানী ম্যাডাম’। ‘অন্ন চাই, প্রাণ চাই’, কর্ণকুন্তী সংবাদ, কিংবা রবীন্দ্রনাথের ‘রক্তকরবী’, সে যাই হোক না কেন, মহড়ায় ভুল হলেই রীতিমতো বইয়ের পাতা খুলে প্রতিটি লাইন অংশগ্রহণকারীদের কাছে তুলে ধরেন তিনি। আবৃত্তি, গান, শ্রুতিনাটকের ক্ষেত্রেও তিনি একই ভূমিকা পালন করে থাকেন। তালিম দেওয়ার ক্ষেত্রে যতক্ষণ না বিষয়টি সঠিক হচ্ছে, ততক্ষণ তিনি চেষ্টা চালিয়ে যান। সেই কারণেই বন্দিরাও তাঁকে অত্যন্ত সমীহের চোখে দেখেন।
জেলে বন্দিরা ফুটিয়ে তোলেন নানা হাতের কাজ। সেই তালিকায় আছে বাঁশের ফুলদানি, আসন, নানা বিষয় নিয়ে ছবি, কারুকার্য করা চাদর, বই বাধাই প্রভৃতি। এই কাজের ক্ষেত্রে বরাবরই বন্দিদের উৎসাহ জুগিয়ে থাকেন কারাদপ্তর ও জেলের কর্তারা। তেমনি দমদম জেলে বন্দিদের পাশে থেকে দেবযানী মুখোপাধ্যায় যেভাবে নিজেকে নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়েছেন, তাতে রীতিমতো খুশি জেল কর্তৃপক্ষ। জেলের কর্মীদের একাংশের কথায়, মামলার দিন ছাড়া অন্য আর পাঁচটা দিন ম্যাডাম প্রায় সারাটা দিনই নিজেকে কাজের মধ্যেই ডুবিয়ে রাখেন। সেই তালিকায় আছে সকালে নিয়মিত সংবাদপত্রে চোখ রাখা, জেলের লাইব্রেরি থেকে আনা ইংরেজি সাহিত্যের বই পড়া, ছোটদের পড়ানো, গান শোনা, ফুল গাছের পরিচর্যা করা প্রভৃতি। এখন সরস্বতী পুজো নিয়েও তিনি ব্যস্ত। কারণ প্রতিমার মানানসই মণ্ডপসজ্জা কেমন হবে, তা নিয়েও তিনি আর্টের কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত বন্দিদের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জেলসূত্রের খবর। সব মিলিয়ে অনুষ্ঠানের আগে তারা মেতে আছে প্রস্তুতির আনন্দে।