নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: বাগনানের শীতলপুর গ্রামের গৃহবধূ ঋতুপর্ণা রায়চৌধুরীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় কয়েকদিন আগে। তাঁর শ্বশুরবাড়ির তরফে আত্মহত্যার তত্ত্ব হাজির করা হলেও অভিযোগ, তাঁকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে এবার মৃত ওই গৃহবধূর বাপের বাড়ি বাগনানের এন ডি ব্লক থেকে শ্বশুরবাড়ি শীতলপুর পর্যন্ত এলাকাবাসীরা মৌনমিছিল করলেন। সেই মিছিলে শামিল হলেন মৃত গৃহবধূর মা ও পরিবারের একাধিক সদস্যও। মিছিলে যোগদানকারীদের অভিযোগ, পুলিস প্রথম থেকে অপরাধীদের আড়াল করার একটা চেষ্টা চালাচ্ছে। বধূ নির্যাতন ও তারপর খুনের মতো গুরুতর অভিযোগ উঠলেও, বিষয়টিকে স্রেফ আত্মহত্যা বলে চালাতে ঋতুপর্ণার শ্বশুরবাড়ির লোকজন প্রথম থেকে তৎপর। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনের উপর চাপ বাড়াতে এলাকার বাসিন্দারা এই মিছিল করেন বলে জানা গিয়েছে। কোনও রাজনৈতিক ঘটনা হোক বা এলাকায় আইন-শৃঙ্খলার সার্বিক অবনতি, রাস্তা বা নিকাশির বেহাল দশা নিয়ে মানুষ ‘অরাজনৈতিক’ভাবে পথে নামতে দেখাই যায়। কিন্তু বধূহত্যার মতো অভিযোগকে কেন্দ্র করে এলাকার মানুষ এক হয়ে পথে নেমেছেন—তা খুব একটা দেখা যায়নি। তাই এদিন সকালে বাগনানের এন ডি ব্লক এলাকায় এমন মৌন মিছিল নিয়ে অনেকেই কৌতুহল প্রকাশ করেন। মৃত গৃহবধূর মা রুমা রায়চৌধুরী জানান, মেয়ের মৃত্যুর পর তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হলেও বাকি অভিযুক্তদের এখনও ধরেনি পুলিস। মেয়ের মোবাইল ফোনও পুলিস নাকি এখনও উদ্ধার করতে পারেনি। তাঁর দাবি, মোবাইল ফোন পাওয়া গেলে সত্যিকারের ঘটনা কী, তা সহজেই প্রকাশ হয়ে যাবে। কারণ, দুপুর দেড়টায় মেয়ের মৃত্যু হলেও রাত ১১টা পর্যন্ত তার মোবাইল খোলা ছিল। তাছাড়া, আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছে বলার পর মেয়েকে ওরা বাগনানের একাধিক নার্সিং হোম থাকতে কেন ওদের পরিচিত নার্সিং হোমে নিয়ে গেল?
প্রসঙ্গত, বছর ছ’য়েক আগে শীতলপুরের বাসিন্দা সুমন্ত রায়ের সঙ্গে এনডি ব্লকের বাসিন্দা ঋতুপর্ণার বিয়ে হয়। বিয়ের পর টাকাপয়সা থেকে শুরু করে নানা কারণে তাঁর উপরে অত্যাচার চালানো হতো বলে অভিযোগ। মৃতার পরিবারের দাবি, বেকার সুমন্তকে একটি ওষুধের দোকানও করে দিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু সেই দোকানও একেবারে নিজের নামে করে দেওয়ার জন্য চাপ বাড়ানো হয় ঋতুপর্ণার উপর। গত ২৯ ডিসেম্বর শ্বশুরবাড়ি থেকে ওই গৃহবধূর বাপের বাড়িতে ফোন যায়, তাঁদের মেয়ে গলায় দড়ি লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করায় আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছে। গৃহবধূর পরিজনরা এসে দেখেন, মেয়ে মারা গিয়েছে। তখনই তাঁরা বাগনানা থানায় স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি এবং জায়ের নামে অভিযোগ দায়ের করে। পুলিস সুমন্তকে গ্রেপ্তার করেছে। এ বিষয়ে বাগনান থানার এক পদস্থ পুলিসকর্তাকে ফোন করা হয়। তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। -নিজস্ব চিত্র