গুরুজনের চিকিৎসায় বহু ব্যয়। ক্রোধ দমন করা উচিত। নানাভাবে অর্থ আগমনের সুযোগ। সহকর্মীদের সঙ্গে ঝগড়ায় ... বিশদ
অনেক দোকান ইতিমধ্যেই উঠে গিয়েছে। বুধবার মকর সংক্রান্তির শাহিস্নানের পর ফিরে গিয়েছেন অধিকাংশ পুণ্যার্থী। তাঁদের ফেলে যাওয়া অস্থায়ী হোগলা পাতার ঘর বা ত্রিপলের ছাউনি এখন ফাঁকা। কেউ বা প্লাস্টিক পেতে বা খড় বিছিয়ে দু’-একদিন কাটিয়ে দিয়েছেন। এখন সেগুলি সাগরের জোরালো হাওয়ায় একদিক থেকে অন্যদিকে উড়ছে। লক্ষ লক্ষ মানুষের পদরেণু হাওয়ায় ঘুরপাক খেয়ে আবার আছড়ে পড়ছে। রান্নায় ব্যবহৃত মাটির হাঁড়ি বা এঁটো শালপাতায় উঁকি মেরে দেখছে কুকুর। সাফাই কর্মীদের ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে। মেলার ক’দিন যতটা না ব্যস্ত ছিলেন তাঁরা, তার থেকে অনেক বেশি কাজ ভাঙা মেলায়। হাঁকডাক-হইচইয়ের মধ্যে কথা বলার ফুরসত নেই। কপিলমুনির মন্দির চত্বরে বাঁশের একাধিক ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছিল দর্শনার্থীদের জন্য। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সেখানে শূন্যতা গ্রাস করেছে। তল্পিতল্পা গোটাতে শুরু করেছেন নাগা সাধুরা। শরীর থেকে ‘বিভূতি’ ধুয়ে ফেলে সাফসুতরো হয়ে কেউ বা কামাক্ষ্যা, কেউ বা বারাণসীর উদ্দেশে রওনা হয়ে যাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত স্নানের সময় ছিল। এদিনও বহু পুণ্যার্থী সাগরে ডুব দিয়েছেন। কিন্তু সেটা সংখ্যায় অনেক কম। পা বাড়িয়ে বাসস্ট্যান্ডের দিকে যেতে যেতে কানে এল সুরেলা কণ্ঠে কীর্তন। ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের ভিতরে বড় শামিয়ানা টাঙানো হয়েছিল। সেখানেই চলছিল কীর্তন। গাইছিলেন এক মহিলা শিল্পী। তাঁর সুরে সঙ্গত দিতে দুলে দুলে তাল মেলাচ্ছিলেন উপস্থিত শ্রোতারা। এবছর এখানেও রেকর্ড পরিমাণ ভিড় হয়েছিল বলে জানালেন সহ সম্পাদক স্বামী ভাস্করানন্দ। পুণ্যার্থীদের মধ্যে খিচুড়ি বিলি, অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা, দ্রুত চিকিৎসা ব্যবস্থা সহ একাধিক কর্মকাণ্ড আয়োজিত হয়েছে সাগরের ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘে।
সাগরমেলা চত্বর ফাঁকা হয়ে গেলেও ব্যস্ততা নজরে পড়ল কচুবেড়িয়া বাসস্ট্যান্ডে। একইসঙ্গে জেটিঘাটের অফিসারদের ব্যস্ততাও ছিল নজরে পড়ার মতো। পুণ্যার্থীদের সুরক্ষিতভাবে ঘরে ফেরার ব্যবস্থা করতে তাঁরা চেষ্টার কসুর করছেন না। আর ভেসেলগুলিতে পা রাখার জায়গা নেই। বাড়ি ফেরার তাড়ায় ধাক্কাধাক্কি, হুড়োহুড়ি করে ভেসেলে উঠতে চান সকলে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মীরা সেই ভিড় সামলাতে রীতিমতো নাজেহাল। ওয়াকিটকি হাতে ঘাটের এপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত ছোটাছুটি করছেন তাঁরা। চলতে শুরু করল ভেসেল। হাত নেড়ে বিদায় জানালেন জেলাশাসকের দপ্তরের অফিসাররা। ভেসেল যত এগতে লাগল, ধীরে ধীরে আবছা হতে শুরু করল পশ্চিমবঙ্গের মোহনার সাগরদ্বীপ। ভেসেলের যাত্রীরা সেই দিকেই তাকিয়ে রইলেন। শেষ হল সাগরমেলা। বিরাট এই ভারতবর্ষের একপ্রান্তের ক্ষুদ্র এই দ্বীপটি গত কয়েকদিন ‘নানা জাতি, নানা মত, নানা পরিধানে’র মিলনক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। লক্ষ লক্ষ মানুষ শুধুমাত্র বিশ্বাসের উপর ভর করে বহু দূর থেকে এখানে এসেছিলেন। তাঁদের মধ্যেই অনেকে মানবসাগরে হারিয়ে গিয়েছেন। ওড়িশার সুখটি সাহু বা বালুরঘাটের সেই বৃদ্ধা কি তাঁর বাড়ি ফিরতে পারলেন? ভাবতে ভাবতে কলকাতাগামী বাসে উঠে বসলাম।