নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: জঙ্গি সংগঠন জয়েশ-ই-মহম্মদের লিঙ্কম্যানকে বসিরহাট থেকে গ্রেপ্তার করল ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)। রহুল আমিন মণ্ডল নামে ওই যুবককে শুক্রবার ভোরে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত পেরিয়ে আসা জঙ্গিদের নিরাপদে থাকার ব্যবস্থা করা এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাদের পৌঁছে দেওয়াই ছিল তার কাজ। পাশাপাশি সেনাবাহিনীর তথ্যও সে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের কাছে পাচার করত বলে জানা গিয়েছে। তাকে ট্রানজিট রিমান্ডে বিশাখাপত্তনমে নিয়ে গিয়েছে এনআইএ।
দক্ষিণ ভারতে জয়েশ সহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন কীভাবে জাল ছড়িয়েছে, তার তথ্য হাতে আসে এনআইএ-র। গ্রেপ্তার করা হয় একাধিক জনকে। সেখান থেকে এ রাজ্যের যোগ পান কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অফিসাররা। জানা যায়, বসিরহাটের বাসিন্দা রহুল আমিন মণ্ডল নামে এক যুবকের কাছে জঙ্গিরা আশ্রয় নিয়েছে। ভারতে থাকার জন্য তাদের বৈধ কাগজপত্র করে দিয়েছে সে। রহুল আমিন নিজেও জয়েশের সঙ্গে যুক্ত। একইসঙ্গে সীমান্তে নারী ও শিশু পাচার চক্রও চালাচ্ছে। এরপর থেকেই এনআইএ-র নজরে চলে আসে রহুল। তার গতিবিধির উপর নজরদারি শুরু হয়। সে এলাকার বাইরে থাকায় তাকে কোনওভাবে হাতে পাচ্ছিলেন না অফিসাররা। মোবাইলে নজরদারি চালিয়ে জানা যায়, সে কয়েকদিনের মধ্যে বাংলাদেশে যাবে। তাই বসিরহাটেই রয়েছে। এরপরই এনআইএ-র একটি টিম এ রাজ্যে চলে আসে। টিমের সদস্যরা জানতে পারেন, বসিরহাটের হরিহরপুরে বাড়িতে রয়েছে রহুল। সেখানে হানা দিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃতের বাড়ি থেকে মিলেছে প্রচুর ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড, আধার কার্ড। যার সবগুলি ভুয়ো নয় বলে জানা গিয়েছে। সেখান থেকে একাধিক ব্যক্তির নাম পাওয়া গিয়েছে। যারা জয়েশের সদস্য বলে জানা গিয়েছে।
ধৃতকে জেরা করে অফিসাররা জানতে পেরেছেন, বাংলাদেশে রহুলের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। প্রথমে সে হিউম্যান ট্রাফিকিংয়ের কাজ শুরু করে। ওপার বাংলা থেকে নারী ও শিশুদের নিয়ে এসে তাদের নিষিদ্ধ পল্লিতে বিক্রি করে দিত। এর সঙ্গেই বিভিন্ন সামগ্রী চোরাচালানও করত। বাংলাদেশে যাতায়াতের সুবাদে তার সঙ্গে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের যোগাযোগ হয়। তাকে সেনাবাহিনীর তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই কাজ সে করছিল। সীমান্তে সেনাবাহিনীর গতিবিধি থেকে শুরু করে তাদের ভিতরকার বিভিন্ন তথ্য ও ছবি পাচার করতে শুরু করে। এই কাজে সেনায় কর্মরতদের একাংশ তার কাছে তথ্য পাচার করত বলে জানা গিয়েছে। এই কাজ করতে গিয়ে সে জঙ্গি সংগঠন জয়েশ-ই-মহম্মদে নাম লেখায়। তাকে জঙ্গিদের সীমান্ত পারাপার ও থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়ার কাজ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে তাদের আসল পরিচয়পত্র তৈরি করে দিত সে। তার বাড়ি থেকে ভোটার কার্ড, আধার কার্ড মিলেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বাগে এনে বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত পেরিয়ে আসা জয়েশ জঙ্গিদের শংসাপত্র তৈরি করে দিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তারা ভিন রাজ্যে গেলে ট্রেন বা বাসের টিকিটের ব্যবস্থা করে দিত রহুল। সে নিজেও একাধিকবার দক্ষিণ ভারতে জেহাদিদের ক্যাম্পে ঘুরে এসেছে। তার সঙ্গে বাংলাদেশে জয়েশের কারা যোগাযোগ রাখত, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে।