বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আশোকনগরের গোলবাজার এলাকার যুবক শঙ্কর হালদার পেশায় কাঠমিস্ত্রীর কাজ করেন। পাশের জনকল্যাণ পল্লির বাসিন্দা বর্নালী মজুমদারের সঙ্গে শঙ্করবাবুর সম্পর্ক তৈরি হয়। কিন্তু কলেজ পড়ুয়া মেয়ের জন্য অষ্টম শ্রেণী উত্তীর্ণ কাঠমিস্ত্রী জামাইকে পছন্দ ছিল না বর্নালীদেবীর বাবা দুলাল মজুমদারের। মা সোমা মজুমদার মেয়ের পছন্দকেই মান্যতা দিয়েছিলেন। মাস দুয়েক আগে বর্নালীদেবী বাড়ি থেকে পালিয়ে শঙ্করবাবুকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে আসেন দুলালবাবু। মেয়েকে বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা বলেন। কিন্তু মেয়ে যেতে রাজি না হওয়ায় তাঁকে ও তাঁর শ্বশুর বাড়ির লোকেদেরও দেখে নেওয়ার হুমকি দেন বলে অভিযোগ। দিন সাতেক আগে তিনি একবার কুড়ুল হাতে মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে এসেছিলেন। কিন্তু দরজায় বন্ধ থাকায় বাইরে থেকে খুনের হুমকি দিয়ে ফিরে যান বলে অভিযোগ। বার বার এই ঘটনা ঘটায় পরিবারের তরফে গৃহবধূকে থানায় অভিযোগ জানানোর পরামর্শও দেওয়া হয়। কিন্তু বাবার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করতে রাজি হননি বর্নালীদেবী। রবিবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ফের মেয়ের বাড়িতে আসেন দুলাল মজুমদার। বাড়ির দুয়ারে কাজ করা বর্নালীদেবী বাবাকে দেখেই দৌড়ে বাড়ির ভিতর ঢুকে যায়। দুলালবাবু মেয়ের নাম ধরে ডাক দিয়ে জানায়, টাকাটা নিয়ে যা। আমি চলে যাব। এই টাকাটা সমিতিতে জমা করে দিবি। এই কথা বলতে বলতে বাড়ির ভিতর ঢুকতে শুরু করে। হাতে ধারালো কাটারি ও কুড়ুল দেখে গৃহবধূর শাশুড়ি সরস্বতী হালদার দুলালবাবুকে আটকানোর চেষ্টা করে। তখন সরস্বতীদেবীর হাত মুচড়ে দিয়ে জোর করে ঘরের ভিতর ঢুকে যান দুলালবাবু। তারপর মেয়েকে এলোপাথাড়ি কোপ মারতে শুরু করেন। মেয়ের ঘাড়ে, হাতে, পিঠে একের পর এক কোপ পড়তে থাকে। গৃহবধূ ও তাঁর শাশুড়ির আর্ত চিৎকারে আশপাশের বাসিন্দারা দৌড়ে আসেন। এরপর ঘরের ভিতর একটি ধারালো দা ফেলে কুড়ুল হাতে ঘর থেকে বেরিয়ে যান দুলালবাবু। তার হাতে রক্তাক্ত কুড়ুল দেখে ভয়ে কেউ থামানোর চেষ্টা করেনি। স্থানীয় বাসিন্দারা বর্নালীদবীকে অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে আর জি কর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। বর্তমানে ওই গৃহবধূ আর জি কর হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। এদিন ঘটনার খবর পেয়ে স্টেট জেনারেল হাসপাতালে দৌড়ে আসেন গৃহবধূর মা সোমা মজুমদার সহ আশাপাশের লোকেরা। তারাও এই ঘটনায় হতবাক হয়ে গিয়েছেন। একবাক্যেই অশোকনগরের বাসিন্দারা এমন হিংস্র বাবার কঠোর শাস্তি চাইছেন। গৃহবধূর শাশুড়ি সরস্বতীদেবী বলেন, সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ আমি বাজার যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হচ্ছিলাম। ওই সময় বৌমার বাবা হাতে কাটারি নিয়ে বাড়ির সামনে হাজির হয়। এর আগেও খুনের হুমকি দিয়ে গিয়েছিল। এরপর বৌমার নাম ধরে ডেকে টাকা নিয়ে যেতে বলে। বৌমা ঘরে ঢুকে যাওয়ায় সেও ঘরে ঢোকার চেষ্টা করে। আমি আটকাতে গেলে আমার হাত মুচড়ে ঠেলে দেয়। এরপর ঘরে ঢুকে বৌমাকে কোপাতে শুরু করে। আমাদের চিৎকারে প্রতিবেশীরা দৌড়ে এলে সে পালিয়ে যায়। জানি না বৌমকে বাঁচিয়ে বাড়ি আনতে পারব কি না। আমরা বৌমার বাবার কঠোর শাস্তি চাই।