বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
২০১৩ সালের ৭ জুন পাশবিক অত্যাচার করে কলেজ ছাত্রীকে খুনের নারকীয় ঘটনা এখনও ভুলতে পারেনি কামদুনি। ওইদিন দুপুরে রাজারহাট ডিরোজিও কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়ে ফিরছিলেন ওই তরুণী। মূল রাস্তা থেকে হেঁটে বাড়ি যাওয়ার প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তার পুরোটাই প্রায় ফাঁকা। সেকারণে দিদিকে বাড়ি নিয়ে যেতে ভাইয়ের আসার কথা ছিল। কিন্তু টিপটিপ বৃষ্টিতে ভাইয়ের আসতে দেরি হওয়ায় ছাত্রী একাই হেঁটে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ওই সময় রাস্তার ধারে ভেড়ি লাগোয়া সীমানা প্রাচীর ঘেরা জমির মধ্যে মদ ও মাংসের আসর বসিয়ে ছিল সাজাপ্রাপ্তরা।
শুনশান রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া ছাত্রীর মুখ চাপা দিয়ে উঁচু পাঁচিলের মধ্যে ঢুকিয়ে নেয়। এরপর কেয়ারটেকার থাকার ঘরে ছাত্রীকে গণধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। ওইদিন সন্ধ্যায় ছাত্রীর অর্ধনগ্ন মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় কামদুনি গ্রাম ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে। দোষীদের শাস্তির দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন কামদুনি গ্রাম ছাড়িয়ে রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ১৪ জুন খোদ মুখ্যমন্ত্রী কামদুনি গ্রামে মৃতার বাড়িতে যান। ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি মোট আট অভিযুক্তের মধ্যে বিচারক আনসার আলি, সইফুল আলি ও আমিন আলিকে ফাঁসির সাজা দেন। শেখ ইনামুল ইসলাম, ভোলানাথ নস্কর ও আমিনুর ইসলামকে আমৃত্যু যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বাকি দুই জন প্রমাণের অভাবে ছাড়া পায়। দোষীদের শাস্তির দাবিতে কামদুনি আন্দোলন মঞ্চ তৈরি, সরকারি আনুকূল্যে নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যদের চাকরি নিয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়া ও আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ানো সহ নানান বিতর্ক প্রত্যক্ষ করেছে রাজ্যবাসী।
কিন্তু, হায়দরাবাদের ঘটনা দেখার পর ফের নতুন করে কামদুনিতে দোষীদের দ্রুত শাস্তির দাবি উঠতে শুরু করেছে। এই ঘটনার কথা জানার পর নির্যাতিতার মা বলছেন, আমার মেয়ের দোষীদের এমন সাজা দিলেই সঠিক শাস্তি হত। তিনি বলেন, বেশ করেছে পুলিস। এমন করেই নৃশংসভাবে অপরাধীদের মারা উচিত। হায়দরাবাদের পুলিসকে ধন্যবাদ। নির্যাতিতার ছোট ভাই বলেন, নিম্ন আদালতে তিনজনের ফাঁসি ও তিন জনের যাবজ্জীবন হয়েছে। হাইকোর্টে কেস পড়ে রয়েছে। আসামিরা তো আরামেই রয়েছে। বাড়ির কারোর কিছু হলে ওদের বাড়িতেও আনছে পুলিস। ওদের সাজা দেখতে আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে? হায়দরাবাদে এনকাউন্টার করে খতম করে পুলিস ঠিক করেছে। কোনও মেয়েকে এইভাবে খুন করা হলে মায়ের কত কষ্ট হয়, কেউ বুঝতে পারবে না। আমার দিদিকে নৃশংসভাবে খুন করা অপরাধীদের একইভাবে সাজা দেওয়া হলে খুব ভালো হত। আমি চাই, আগামী দিনে যারাই এমন কাজ করবে, তাদের এইভাবে খুনের আইন করা হোক, তা না হলে ঘটনার একমাসের মধ্যে সাজা ঘোষণার আইন করতে হবে। সাজা ঘোষণার এক মাসের মধ্যে শাস্তি কার্যকর করতে হবে। কামদুনি আন্দোলনের সেই সময়কার পরিচিত মুখ মৌসুমি কয়াল শুক্রবার বলেন, সকালে এই খবর জানার পর কী আনন্দ ও শান্তি লাগছে বলে বোঝানো যাবে না। এতদিনে ঠিকঠাক বিচার হয়েছে। কামদুনির অপরাধীদের এইরকম সাজা দিলে সঠিক কাজ হতো।