কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
রেল পুলিস জানিয়েছে, মৃত দাদু ও নাতনির নাম রজকৃষ্ণ ধর (৫৫) ও জুঁই ধর (৭)। নাতনি বরানগরের তীর্থভারতী বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। তাঁরা বরানগরের বনহুগলি জিএস ব্লক টু’তে ভাড়া থাকতেন। জুঁইয়ের বাবার নাম তারাশঙ্কর ধর। তিনি একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী। পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত তিন বছর ধরে জিএস ব্লক টু’তে ভাড়া থাকছেন এই ধর পরিবার। এদিন বিদ্যালয়ে বাংলা পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিল জুঁই। তার মা বিভাদেবীর ভাইকে স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার পর মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা ছিল। রেল লাইনের ধারে একটি চায়ের দোকানে নাতনিকে নিয়ে শ্বশুরকে অপেক্ষা করতে বলেছিলেন বিভাদেবী। কিন্তু বউমা দেরি করছে দেখে নাতনিকে নিয়ে লাইন পার হতে যান রজকৃষ্ণবাবু। তখনই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটল।
বনহুগলির জিএস ব্লকের ওপারেই বরানগরের সতীন সেন নগর। হেঁটেই তীর্থভারতী স্কুলে নাতনি নিয়ে যেতেন দাদু। রেল পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দাদুর হাত ধরে ট্রেন লাইন পার হতে গিয়ে আপ বর্ধমান লোকালটি আসতে দেখে একরত্তি জুঁই। ট্রেন দেখেই সে চিৎকারও করেছিল। কিন্তু কানে কম শোনা দাদু শুনতে পাননি নাতনির কথা। আশেপাশের লোকজনও সেই মুহূর্তে চিৎকার করে উঠলেও চোখের সামনে দ্রুত গতিতে আসা বর্ধমান লোকাল ছিন্নভিন্ন করে দিয়ে যায় দু’টি দেহ।
দুর্ঘটনার পর এলাকার লোকজন জড়ো হতে শুরু করে। দুপুর ১২টা ৩ মিনিট থেকে দুটো আপ লাইনে গাছের ডাল ফেলে রেল অবরোধ শুরু করেন স্থানীয়রা। দুপুর ১টা ২৬ মিনিট পর্যন্ত অবরোধ চলে। এতে আপ লাইনে আসা ট্রেন দাঁড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রেল যাত্রীরা ট্রেন থেকে নেমে অবরোধ তুলতে গেলে বচসা থেকে হাতাহাতি বাধে তাদের সঙ্গে। পরে রেল পুলিস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বরানগরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলার সুনত বিশ্বাস বলেন, এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন লাইন পারাপার হন। বনহুগলির এই এলাকার ওপারেই সতীননগর, ৩৪ সি বাসস্ট্যান্ড। ওপারে যেতে হলে অনেকটা ঘুরে যেতে হয়। সময় বাঁচাতে এই পথেই যাতায়াত করেন। এখানে ফুটওভার ব্রিজ হলে দুর্ঘটনা আর ঘটবে না।
চোখের সামনে মেয়ে ও শ্বশুরের মৃত্যু দেখেন মা বিভাদেবী। লাইনে পড়ে থাকা মৃতদেহ দুটি দেখে অজ্ঞান হয়ে যান তিনি। স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসেন। এই মৃত্যুর জেরে বনহুগলির জিএস ব্লক টু এলাকা শোকস্তব্ধ। মৃতার বাড়ির কেউ কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না। বাড়ির মালিক অভিজিৎ সাহা বলেন, ফুটফুটে মেয়েটি প্রায়শই আমাদের কাছে আসত। ওকে ওর মা বা দাদু স্কুলে পৌঁছে দিত। এদিন মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল মায়েরই। কিন্তু, অদৃষ্ট লিখনে ঘটল দুর্ঘটনা।
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী বলেন, ডাউন লাইন খোলা ছিল। আপ লাইনে অবরোধ হয়। এর জেরে ১৪টি লোকাল ট্রেন বাতিল করা হয়েছে।