নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ডেঙ্গু মোকাবিলায় ওয়ার্ড ভিত্তিক সাফাই কর্মী এবং স্বাস্থ্য কর্মীরা একসঙ্গে এবার বাড়ি বাড়ি যাবেন। বুধবার বিধাননগর পুরসভায় প্রথমবার ডেঙ্গু মোকাবিলা নিয়ে কী কী পদক্ষেপ হবে, সেবিষয়ে আলোচনার জন্য স্বাস্থ্য, জঞ্জাল অপসারণ এবং পরিবেশ বিভাগ বৈঠকে বসেছিল। সেই বৈঠকেই এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। জঞ্জাল অপসারণ বিভাগের মেয়র পারিষদ দেবাশিস জানা বলেন, বিধাননগর তথা বিশেষভাবে সল্টলেকে বাড়িতে পুরকর্মীদের ঢুকতে দেওয়ার ক্ষেত্রে বাসিন্দারা অনেক সময় বাধা দেন। এর ফলে ডেঙ্গু মোকাবিলার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এই অভিযোগ বারবারই উঠেছে। তাই এবার পুরসভার পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ওয়ার্ডের সাফাই কর্মীদের সঙ্গেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাসিন্দাদের ডেঙ্গু মোকাবিলার পাঠ দেবেন স্বাস্থ্য কর্মীরাও। ডেঙ্গু মোকাবিলায় আগামী মাস দুয়েক এভাবেই লাগাতার কাজ করা হবে বলে, এই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সল্টলেকে কোনও বাড়ি জল জমেছে কি না, ডেঙ্গু মোকাবিলায় কী কী করবেন এবিষয়ে স্বাস্থ্য কর্মীরা প্রচারে গেলে— তাঁদের তাড়িয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বহু ক্ষেত্রে আবার অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের থেকে হুমকি, দুর্ব্যবহারেরও শিকার হতে হয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীদের। এবিষয়ে বারবার বাসিন্দাদের বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে পুরসভা। বাসিন্দাদের পাল্টা যুক্তি পুরসভার কর্মী বলে অচেনা লোক বাড়িতে ঢুকে গিয়ে কিছু করলে, তার দায় কে নেবে?
এবিষয়ে বাসিন্দারা কাউন্সিলারদের মাধ্যমে বারবারই পুরসভাকে নিজেদের সমস্যার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু, গত চার বছরে এবিষয়ে কোনও সমাধান সূত্র বার করা সম্ভব হয়নি। কারণ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলি একবারও এবিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা বা বৈঠক করেনি। অবশেষে বুধবার এই বৈঠকে এই সমস্যাগুলি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়, ওয়ার্ডের সাফাই কর্মীরা প্রত্যেকদিন বাড়িতে যায়। তাঁদের খুব সহজেই চেনেন বাসিন্দারা। তাই এবার থেকে তাঁদের সঙ্গেই স্বাস্থ্য কর্মীরাও বাসিন্দাদের কাছে গিয়ে বাড়ি বাড়ি জমা জল নিয়ে নজরদারি করবেন। পাশাপাশি ডেঙ্গু মোকাবিলায় কী কী করণীয় সেবিষয়েও বাসিন্দাদের সচেতন করা হবে।
দেবাশিসবাবু বলেন, এদিনের বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা কার্যকর হলে আশা করা যায় এই সমস্যাগুলি অনেকটাই সমাধান হয়ে যাবে। একইসঙ্গে এর ফলে কোথায় কোথায় জমা জলের সমস্যা রয়েছে, কোথায় জ্বর হচ্ছে, কোথায় জঞ্জাল জমে রয়েছে অথবা কোথায় গাছ-পালা কেটে দিতে হবে, জঙ্গল সাফাই করতে হবে— সেবিষয়ে ৩ বিভাগের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা যাবে।
দেবাশিসবাবু আরও জানান, এদিন সিদ্ধান্ত হয়েছে, তিন বিভাগের মেয়র পারিষদ (তিনি ছাড়াও স্বাস্থ্য বিভাগের প্রণয় রায় এবং পরিবেশ বিভাগের রহিমা বিবি) নিয়মিত পরস্পরের মধ্যে পরিস্থিতির খোঁজখবর নেবেন। কাজের পর্যালোচনা করা হবে। কোনও কাজকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের হিসেবে না ধরে, তিন দপ্তর একত্রিতভাবে ডেঙ্গু মোকাবিলায় সব কাজ করবে। এছাড়াও ডেঙ্গু মোকাবিলায় যে সমস্ত এলাকাগুলিতে জ্বরজারি বেড়েছে, সেখানে বিশেষ অভিযান করার কথা এদিনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়াও আরও বেশি করে স্বাস্থ্য ক্যাম্প করা হবে। বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা করতে যে কর্মীরা যাবেন, তাঁদেরও এবিষয়ে আরও সতর্ক হয়ে তথ্য সংগ্রহ করার নির্দেশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।