বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তপন সাহা বলেন, পুজোর সময় গাইঘাটা ও বনগাঁয় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছিল। বর্তমানে তা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। বারাকপুর মহকুমার বিভিন্ন পুরসভা এলাকায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আবার কিছুটা বাড়ার খবর এসেছে। তবে প্রত্যেক সপ্তাহেই ডেঙ্গু নিয়ে আমাদের বৈঠকে কমা ও বাড়ার বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। চলতি সপ্তাহে পর্যালোচনা বৈঠকের পর বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে। তবে জেলার প্রতিটি এলাকায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য কর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন পুরসভা ও পঞ্চায়েত একই সঙ্গে কাজ করছে।
স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালে উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার নেয়। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোরও শুরু হয়। ২০১৮ সালে কোমর বেঁধে নামে প্রশাসন। যার ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ জেলায় অনেকটাই কমে যায়। স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রের খবর, গতবছর জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল প্রায় ৭ হাজার ১৫২ জন। কিন্তু, ২০১৯ সালে সেই সংখ্যা কমার পরিবর্তে আবার বাড়তে শুরু করেছে। চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার। পুজোর পর থেকে প্রত্যেক সপ্তাহে ১,২০০ থেকে ১,৫০০ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। সরকারি মতে, এখনও পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন ১৬ জন। তার মধ্যে পুজোর আগে মারা গিয়েছেন ১১ জন ও পুজোর পরে ৫ জন।
কিন্তু, স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রের খবর, মৃতের সংখ্যা ৫০-এর বেশি। গ্রামীণ এলাকার মধ্যে সব থেকে বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন গাইঘাটা ব্লকের বাসিন্দারা। শহর এলাকার মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হাবড়া এলাকায়। সেখানে এখনও পর্যন্ত প্রায় ২,৩০০ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া দক্ষিণ দমদমে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৪০০ জন ও বরানগরে প্রায় ৩১৩ জন। হাবড়া এলাকায় বর্তমানে ডেঙ্গুর প্রকোপ আগের তুলনায় কমেছে। হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নদীয়ার হরিণঘাটা ব্লক থেকে প্রতিদিন প্রচুর ডেঙ্গু রোগী আসছেন। বর্তমানে এই হাসপাতালে ৫০-এর বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ৮০ জনের বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন।
গতবছরের থেকে কেন এবার জেলায় ডেঙ্গু রোগের আক্রমণ বাড়ল? আপাতত এই প্রশ্ন বিভিন্ন মহলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রের খবর, ২০১৮ সালে সেই নির্বাচনের ঝামেলা ছিল না। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের আগে থেকেই রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ে উত্তর ২৪ পরগনা জেলায়। ভোটের কাজের চাপের কারণে ব্লক স্তরেও ডেঙ্গু নিয়ে সেই অর্থে খুব একটা কাজ হয়নি। ভোট পরবর্তী পর্যায়েও রাজনৈতিক পরিস্থিতি টালমাটাল হয়। ফলে গতবার বিভিন্ন পুরসভা, গ্রাম পঞ্চায়েত যেভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ঝাঁপিয়েছিল, এবার সেই কাজ তেমনভাবে হয়নি বললেই চলে। জুলাই মাস থেকে বিভিন্ন পুরসভা কিছুটা হলেও গা ঝাড়া দিয়ে ডেঙ্গু মোকাবিলায় মাঠে নামে। ফলে হাবড়া, দেগঙ্গার মতো এলাকায় কিছুটা হলেও আগের তুলনায় ডেঙ্গুর প্রকোপ কমেছে। কিন্তু, ডেঙ্গুবাহী মশা প্রতিনিয়ত পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর পাশাপাশি প্রতিকূলতার সঙ্গে নিজেকে বদলে নেওয়ায় নতুন নতুন এলাকায় প্রকোপ বাড়াচ্ছে। তবে শীত বাড়লে প্রকৃতিগতভাবে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমবে বলেই আশাবাদী স্বাস্থ্য দপ্তর।