দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় ও ব্যবসা থেকে অর্থাগম যোগ। প্রেমের প্রস্তাব পেতে পারেন। পুজো পাঠে মন। ... বিশদ
রায়দিঘি বিধানসভার মথুরাপুর ২ ব্লক থেকেই ছয় জন মৎস্যজীবী গত ৩ নভেম্বর ট্রলারে মাছ ধরতে বেরিয়েছিলেন। এর মধ্যেই কঙ্কনদিঘি পঞ্চায়েত এলাকা থেকেই আছে চার জন মৎস্যজীবী। এর মধ্যে এক মৎস্যজীবী আগেই ফিরে এসেছেন। আর দুই মৎস্যজীবীর দেহ উদ্ধার করে আনা হয়েছে বৃহস্পতিবার বিকালে। আর এক মৎস্যজীবী এখনও নিখোঁজ আছেন। কঙ্কনদিঘি পঞ্চায়েতের মীরপাড়া গ্রামে বাস মৎস্যজীবী লুৎফর মীরের। গত ৯ নভেম্বর বুলবুল ঝড়ের তাণ্ডবের পর থেকেই তাঁর স্ত্রী আলেয়া মীর খড়ের চালের ঘরের বারন্দায় বসেই কেঁদেই চলেছেন। ছয় বছরের পুত্র আলমগির, এগারো বছরের নুরজাহান, আট বছরের সারিদা মার কাছে প্রতিদিন মার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করে যাচ্ছে আব্বা কখন মাছ আনবে। আর লুতফরের আশি বছরের মা ফতেমা বিবি কথা বলার শক্তি হারিয়েছেন। বার বার বিড়বিড় করে বলছেন ছেলে কি আর ফিরবে না। আলেয়া মীর বলে, স্বামী এত বছর ধরে মাছ ধরতে যাচ্ছে এমন বিপদ কোনদিন হয়নি। এবার ঝড়ের আগাম ঘোষণা জেনে বারণ করেছিলাম যেতে। বারণ শোনেনি। ১২ নভেম্বর পাশের এলাকার বাসুদেব ফিরে এলেও আমার স্বামী ফেরেনি। তাঁরা তখনও পর্যন্ত খবর পাননি যে লুৎফরের দেহ এদিনই উদ্ধার হয়েছে।
কথা বলতে বলতে আলেয়ার বাড়িতে ত্রাণ নিয়ে হাজির কঙ্কনদিঘি পঞ্চায়েত প্রধান পূর্ণিমা নস্কর, জেলা পরিষদ সদস্য অলোক জলদাতা, যুব নেতা সিরাজউদ্দিন মোল্লা। পঞ্চায়েত থেকে ২০০ টাকা, রান্নার সরঞ্জাম, ত্রিপল, কম্বল, চাল, গম, শাড়ি তুলে দেওয়া হয়। আলেয়া বলেন, আমার সংসার চালাবার জন্য টাকা চাই না, চাকরি চাই সংসারে। কে চালাবে সংসার। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত আলেয়া জানতেন না তাঁর স্বামী আর নেই। বিকালে খবর আসতেই ছুট দিলেন রায়দিঘি জেটিঘাটে।
কঙ্কনদিঘির সিপাইপাড়ার বাসিন্দা মৎস্যজীবী মহেন্দ্র বিশ্বাস। তাঁর খুড়শ্বশুর বাসুদেব মুদি ফিরে এলেও সে ফিরে না আসায় শোকের পরিবেশ তাঁর পরিবারে। উত্তরপ্রদেশে বাড়ি মহেন্দ্রর। দশ বছর আগে বিয়ের পর থেকে স্ত্রী মঙ্গলার সাথে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। শ্বশুর সন্ন্যাসী মুদির সাথে নদীতে মাছ ধরতে যেতেন। এবারই খুড়শ্বশুর বাসুদেব মুদির সাথে নদীতে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। মা মঙ্গলার কাছে তাঁর দুই কন্যা বার বার জিজ্ঞাসা করছে বাবা কখন আসবে। স্ত্রী মঙ্গলা কাঁদতে কাঁদতে জানান, মাঝির জন্য এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। ঝড় দেখে ওরা ফিরে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু মাঝি ফিরে আসতে দেয়নি। আমার সংসার কি হবে এবার। সংসার ভেসে গেল। স্বামীর ফেরার আশায় এখন বারান্দায় বসে মঙ্গলা। তাঁর আশা সবাই ফিরছে স্বামীও ফিরবে।
শোকের পরিবেশ উত্তর কঙ্কনদিঘির মৎস্যজীবী রেণুপদ মুদির পরিবারে। কথা বলার অবস্থায় নেই স্ত্রী মিনতি দেবী। একমাত্র ছেলে বাবার দেহ আনতে গিয়েছে রায়দিঘিতে। পঞ্চায়েত থেকে সব পরিবারের হাতে ত্রাণ তুলে দিলেও তাঁরা টাকা চান না, চান সংসার চালানোর জন্য একটা চাকরি।