নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: গত কয়েক বছর ধরেই মশার বংশবৃদ্ধি রোধে সচেতনতা কর্মসূচিতে কলকাতার কাউন্সিলারদের সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সিংহভাগ জনপ্রতিনিধিই সেই বার্তাকে ধর্তব্যের মধ্যে আনেননি। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ কলকাতার মেয়র। তাই মেয়র ফিরহাদ হাকিম এবার স্পষ্টভাষায় নির্দেশ দিলেন, ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়ার জীবাণুরোধী কর্মসূচিতে আরও বেশি করে কাউন্সিলারদের অংশগ্রহণ করতে হবে। শুক্রবার কলকাতা পুরভবনে ডেঙ্গু সংক্রাম্ত এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পর মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, সপ্তাহে অন্তত একদিন পুর স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে কাউন্সিলারদের বেরতে হবে। একইসঙ্গে সচেতনতা এবং সাফাই অভিযান চালাতে হবে। এতে শুধু কাউন্সিলাররা নন, সংশ্লিষ্ট এলাকার বিশিষ্টদেরও যুক্ত করতে হবে। ডেপুটি মেয়র তথা স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ বৃহস্পতিবার অভিযোগ করেছিলেন, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রচার চালানোর জন্য হ্যান্ড মাইক কিনে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু স্বাস্থ্যকর্মীরা তা ব্যবহার করেননি, এমনকী কাউন্সিলাররাও এবিষয়ে নিষ্ক্রিয় থেকেছেন। মেয়র এপ্রসঙ্গে বলেন, কাউন্সিলারদের সক্রিয় করতে এবার তিনি বিজ্ঞপ্তি দেবেন। মেয়রের এই সিদ্ধান্তের পর এদিন বিকেলেই পুর প্রশাসনের তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।
এদিনের বৈঠকে মেয়র-ডেপুটি মেয়র ছাড়াও রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব সঙ্ঘমিত্রা ঘোষ, স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা ডাঃ অজয় চক্রবর্তী, স্পেশাল পুর কমিশনার তাপস চৌধুরী সহ কলকাতা পুরসভা ও স্বাস্থ্য দপ্তরের শীর্ষকর্তারা উপস্থত ছিলেন। এই বৈঠক থেকে পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের যুগ্ম সচিব শান্তনু মুখোপাধ্যায়কে মাথায় রেখে একটি বিশেষ কমিটি গড়া হয়েছে। যে কমিটিতে পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর, স্বাস্থ্য দপ্তর ও কলকাতা পুরসভা রয়েছে। পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে পুরসভার যে স্বাস্থ্য ইউনিটগুলি রয়েছে, সেখানে যে রক্ত পরীক্ষা করা হয়, সেগুলির স্যাম্পেল ডেঙ্গু পরীক্ষার মেশিনে দিনে দু’বার তোলা হয়। যাঁরা রক্ত পরীক্ষা করিয়েছেন, তাঁদের মোবাইলে এসএমএসে জানিয়ে দেওয়া হয়, ডেঙ্গু হয়েছে, কি হয়নি। এদিন স্থির হয়েছে, স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে রক্ত পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় রিপোর্ট ওই কমিটির তদারকিতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ওয়েবসাইটে আপলোড করা হবে।
কলকাতায় এমাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ২৬০০ ছাড়িয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্ক চরমে উঠেছে। এক্ষেত্রে পুর প্রশাসন বরাবরই পার্শ্ববর্তী পুর এলাকাগুলির কাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। অতীনবাবু এদিন স্বাস্থ্যসচিবকে জানিয়েছেন, কলকাতা লাগোয়া যে পুর এলাকাগুলি রয়েছে, সেখানে মশারোধী পরিকাঠামো গড়ে তোলা উচিত। বৈঠকের পর এপ্রসঙ্গে মেয়র বলেন, কলকাতার লাগোয়া এলাকাগুলিতে ডেঙ্গুর প্রবণতা সবথেকে বেশি হচ্ছে। মশার বাড়বাড়ন্ত হচ্ছে। যেকারণে কলকাতা পুরসভার সংযুক্ত এলাকায় ডেঙ্গুর দাপট বাড়ছে। পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলি থেকে মশা উড়ে আসছে শহরের দিকে। এই সব বিষয় এদিনের বৈঠকে তোলা হয়েছে। পাশাপাশি মেয়র বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন সংস্থার অধীনস্থ আবাসন বা সরকারি অফিসগুলিতে পর্যাপ্ত সাফাইয়ের কাজ করা হয় না। আমি স্বাস্থ্যসচিবকে বলেছি, মুখ্যসচিব পর্যায়ের বৈঠক ডেকে কেন্দ্রীয় সরকারের ওই সংস্থাগুলির কর্তাদের এব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বলা উচিত। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তাদের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে অনিয়মিত বৃষ্টি নিয়ে। আগামী ১৫ দিন আবারও অকাল বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। যা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন খোদ মেয়রও। বললেন, বৃষ্টিপাতের ভারসাম্যে যথেষ্ট অভাব রয়েছে। সারা বিশ্বেই এই সমস্যা চলছে। এই লাগামছাড়া বৃষ্টির কারণেই ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী মশার বাড়বাড়ন্ত হচ্ছে। আগামী ১৫ দিন আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে।