ব্যবসা সূত্রে উপার্জন বৃদ্ধি। বিদ্যায় মানসিক চঞ্চলতা বাধার কারণ হতে পারে। গুরুজনদের শরীর-স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন ... বিশদ
শ্বাসজনিত সমস্যায় এখন সবচেয়ে বেশি ভুগছে শিশুরা। বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ অপূর্ব ঘোষের কথায়, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দূষণের প্রভাব স্লো পয়জন বা ধীরে ধীরে বিষক্রিয়ার মতো। রাতারাতি তা সমস্যা তৈরি করে না। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা সৃষ্টি করে। শিশুদের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়েছে। পাশাপাশি ভিটামিন ডি-এর সমস্যাও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। ফলে রিকেট বা হাড়ের সমস্যায় ভুগছে বেশিরভাগ শিশু। পরীক্ষা করলে দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ শিশুরই শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি আছে। প্রশ্ন হল, দূষণের সঙ্গে ভিটামিন ডি-এর সম্পর্ক কী? অপূর্ববাবুর বক্তব্য, ভিটামিন ডি পাওয়া যায় সূর্যালোক থেকে। কিন্তু দূষণের বাড়াবাড়িতে যথেষ্ট সূর্যালোক থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা। সূর্যের আলোর অভাবে সমস্যা বাড়ছে শিশুদের পাশাপাশি বড়দেরও। অনেকেই দূষণ আটকাতে মাস্ক ব্যবহার করেন। কিন্তু তা মানসিক শান্তি ছাড়া বড় কোনও সমাধান করে বলে মানেন না অপূর্ববাবু। তাঁর কথায়, এতে ক্ষুদ্র দূষণকণা এড়ানো যায় না। তাই সেই অর্থে দূষণ থেকে বাঁচার উপায় নেই। আসলে আমাদের দেশে দূষণ নিয়ে কিছু সদর্থক উদ্যোগ নেওয়া কঠিন, এমনটাই মনে করছেন অপূর্ববাবু। তাঁর কথায়, প্রতিটি স্তরে যেভাবে রাজনীতি জড়িয়ে যাচ্ছে, তাতে দূষণের সঙ্গে মোকাবিলা করা কতটা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। সম্প্রতি রবীন্দ্র সরোবরের দূষণ নিয়ে যেভাবে রাজনীতি হয়েছে, তা একজন নাগরিক হিসেবে অত্যন্ত বেদনাদায়ক, উপলব্ধি অপূর্ববাবুর। তাঁর কথায়, কেন্দ্র ও রাজ্য যতক্ষণ না রাজনীতি দূরে রেখে দূষণ নিয়ে পদক্ষেপ করবে, ততক্ষণ সাধারণ মানুষের নিস্তার নেই।
বিশিষ্ট পালমোনোলজিস্ট ডাঃ সুস্মিতা রায়চৌধুরীর কথায়, কলকাতা থেকে যাঁরা বাইরে বেড়াতে যান, তাঁরা ফিরে এসে বুঝতে পারেন, চোখ জ্বালা করছে। হাত-পা চটচট করছে, অস্বস্তি হচ্ছে। এসবই দূষণের লক্ষণ। কলকাতা শহরেই ব্রিজের উপর দাঁড়ালে বোঝা যায়, দূষণের মাত্রা কী ভয়ঙ্কর। চারদিকের বাতাসে যেন কালচে বা বাদামি ভাব। আসলে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স নিয়ে আগে কোনও আলোচনা বা মাতামাতি ছিল না। এখন দূষণের প্রকোপে মানুষ তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখছি, আউটডোরে শ্বাসকষ্টজনিত অসুখের সমস্যা অত্যধিক বেড়ে গিয়েছে। বিশেষত সারাবছর ধরে কাশি ও কালো কফে নাজেহাল হচ্ছেন মানুষ। ব্রঙ্কাইটিসের সমস্যা বাড়ছে। তাহলে উপায়? সুস্মিতাদেবীর কথায়, আমরা যদি ব্যক্তিগতভাবে কিছুটা সচেতন হই, তাহলে খানিকটা সমস্যা এড়ানো যায়। বাড়িতে অহেতুক কোনও জ্বালানির ঝামেলা না বাড়ানোই ভালো। মশা মারার ধূপ খুব প্রয়োজন না হলে জ্বালাবেন না। শীতকালে উষ্ণতা বাড়াতে অনেক জায়গায় টায়ার পোড়ানো হয়। এই মারাত্মক কাজটি বন্ধ করুন বা এড়িয়ে চলুন। কাঠকয়লা বা সমগোত্রীয় জ্বালানি একেবারে বর্জন করুন। রাস্তাঘাটে কোনও দোকানে তার ব্যবহার হলে, সেই এলাকা পরিত্যাগ করুন।
হোমিওপ্যাথির জাতীয় প্রতিষ্ঠান সল্টলেকের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হোমিওপ্যাথির অধিকর্তা ডাঃ সুভাষ সিং বলেন, এখানে দূষণ তো মানুষের তৈরি বিপর্যয়। আমরা যত গাছ কাটছি, তত গাছ লাগাচ্ছি কি? জলে যে দূষণ হচ্ছে, তাকে আটকাতে আমরা কী কী ব্যবস্থা নিচ্ছি? যাঁরা সিওপিডি, হাঁপানি বা ফুসফুসের সমস্যায় ভোগেন, দূষণের বাড়াবাড়িতে তাঁরা আরও কাবু হয়ে পড়ছেন। আর যাঁদের সেই সমস্যা নেই, তাঁরাও সেই সব রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। হোমিওপ্যাথিতে শ্বাস সংক্রান্ত অসুখ আটকাতে টিউবারকিউলিনাম নামে একটি ওষুধ দারুণ কাজ দেয় আদর্শ পরিস্থিতিতে। কিন্তু আদর্শ পরিস্থিতি আর আমরা পাচ্ছি কই? মানুষ ও ওষুধ, এই দু’য়ের মধ্যে পাঁচিল তুলে দিয়েছে দূষণ। এমনকী দূষণের কারণে শিশুদেরও এমন সমস্যা দেখতে পাচ্ছি, যা এই বয়েসে হওয়ার কথাই নয়। শহরাঞ্চল থেকে এমন বহু মানুষ আমাদের কাছে আসেন, যাঁদের সমস্যাগুলি এমন, যা সাধারণত জুটমিলের কর্মী, অ্যাসবেস্টস কারখানা বা খনি এলাকার কর্মীদের হয়ে থাকে। অর্থাৎ পরিস্থিতি যে কতটা ভয়ঙ্কর, তা এর থেকেই বোঝা যায়।