সম্পত্তিজনিত বিষয়ে অশান্তি বৃদ্ধির আশঙ্কা, আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি। শেয়ার, ফাটকা, লটারিতে অর্থাগম, কর্মক্ষেত্রে গোলযোগের ... বিশদ
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আমডাঙার বইছগাছি মাঠপাড়ার বাসিন্দা আব্বাস আলি। পেশায় দিনমজুর আব্বাস সাহেবের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় মেয়ে রুমা খাতুন (১৮) বড়গাছিয়া আদর্শ হাই মাদ্রাসার একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। গত আগস্ট মাসে আমডাঙার আনোখা এলাকার বাসিন্দা হাসেম আলি বিশ্বাসের মেজ ছেলে রমজান আলি বিশ্বাসের সঙ্গে রুমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল। অষ্টম শ্রেণী উত্তীর্ন রমজান পেশায় দিনমজুরির কাজ করেন। আগামী ১২ অক্টোবর বিয়ের দিন স্থির হওয়ায় আগেভাগেই সমস্ত রকম প্রস্তুতি সেরে ফেলেছিল এই দুই নিম্নবিত্ত পরিবার।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর রমজানের এক আত্মীয় বাড়িতে অনুষ্ঠান ছিল। সেই অনুষ্ঠানে হবু শ্বশুর ও শাশুড়ির অনুমতি নিয়েই রুমাকে নিয়ে যায় রমজান। কিন্তু, ফেরার পথে আমডাঙার ৩৪নম্বর জাতীয় সড়কের রাহানা এলাকায় তাঁদের মারুতি গাড়ির সঙ্গে উল্টো দিক থেকে আসা ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনায় জখম হন রুমা ও রমজান সহ গাড়িতে থাকা মোট চার জন। স্থানীয়রা তাঁদের উদ্ধার করে বারাসত জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা দিয়ে কোনও ক্রমে বেঁচে ওঠেন রুমা। কিন্তু, তাঁর বাঁ পা কেটে বাদ দিতে বাধ্য হন চিকিৎসকরা।
নিজের কাটা পা দেখে স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণায় ডুকরে কেঁদে উঠেছিলেন রুমা। কিন্তু, একবারের জন্যও মুখ ফিরিয়ে নেননি রমজান। প্রতিদিন নিয়ম করে হাসপাতালে এসে হবু স্ত্রীর মাথায় হাত বুলিয়ে চোখের জল মুছিয়ে দিয়েছেন। সান্ত্বনা দিয়ে বলেছেন, তাঁদের চার হাত ও চার পায়ের মধ্যে মাত্র একটি পা বাদ গিয়েছে। বাকি জীবন তাঁরা একসঙ্গে দৌড়বেন। এদিন দুপুরে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার আগে রুমা সুপারের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। সঙ্গে রুমার মা তাজমিরা বিবি ও পিসি শাশুড়ি সাকিলা বিবি। সকলের চোখেই তখন জল। রুমার চোখের জল মুছিয়ে সুপার সুব্রত মণ্ডল তাঁর হাতে তুলে দেন ক্র্যাচ ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্নের সার্টিফিকেট। সুব্রতবাবু বলেন, ওর নকল পায়ের জন্য পিজি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। বিয়ের দিন আমি নিজে ওদের বাড়িতে যাব।
হবু বউমাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হাসপাতালে আসা হাসেম সাহেব বলেন, বিয়ে ঠিক হয়ে রয়েছে। দুর্ঘটনায় আমার ছেলেরও কোনও কিছু হতে পারত। বউমার পা কাটা গিয়েছে বলে বিয়ে ভেঙে দেওয়ার মতো ছোট মানসিকতা আমাদের নেই। বউমাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে নতুন করে বিয়ের দিন স্থির করব। রমজান বলেন, ওই দিন আমারও কিছু হতে পারত। ওকে আল্লা ফিরিয়ে দিয়েছে ওটাই তো বড় কথা। একটা কেন, দু’টি পা না থাকলেও আমার সিদ্ধান্ত হেরফের হতো না। বিয়ের ঠিক হওয়ার দিন থেকেই ওকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেছি। বাকি জীবন আমরা একই সঙ্গে হাত ধরাধরি করে কাটিয়ে দেব।