বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে কুমোরটুলি মৃৎশিল্পীপাড়া এখন বিদেশি পর্যটকদের কাছেও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। প্রায়শই দেখা যায়, গাইডের সাহায্য নিয়ে বিদেশি পর্যটকরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন কুমোরটুলির অলিগলি। দুর্গাপুজোর আগে শখের আলোকচিত্রীদের ভিড়ে কুমোরটুলির এই পাড়ায় ঢোকাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। কালীপুজোর আগে অবশ্য তেমন অবস্থা নেই। মোটামুটি ফাঁকা ফাঁকা মৃৎশিল্পীপাড়ায় এখন কালীপুজো কমিটির লোকজন আর প্রতিমা বহন করার কর্মীদের আনাগোনাই বেশি। আগামী রবিবার কালীপুজো হলেও বেশ কিছু প্রতিমা এখনই মণ্ডপের পথে যেতে শুরু করেছে। বেশিরভাগ প্রতিমায় পড়েছে রঙের পোঁচ। চোখ আঁকার কাজও শেষ হয়েছে অনেক প্রতিমায়।
তবে কুমোরটুলিতে ঘুরতে আসা দূর জেলার কোনও কৌতুহলী বা বিদেশি পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে সারি সারি ডাকিনী, যোগিনীর মূর্তি। যে মূর্তি যত বেশি ভয়ঙ্কর দেখতে হবে, ততই নাকি বেশি দামে বিক্রি হয়ে যাবে। এমন মূর্তি কুমোরটুলিতে কমবয়সি ছেলে বা বাড়ির মহিলারা বানিয়ে ফেলেন। দুর্গাপুজোর নিরঞ্জনের সময় গঙ্গার ঘাটে যেসব প্রতিমা ফেলা হয়, সেগুলির কিছু কাঠামো স্থানীয় ছেলেপুলেরা তুলে এনে ৫০-১০০ টাকায় বেচে দেয় এখানেই। সেই কাঠামোয় যেমন-তেমনভাবে মাটি লাগিয়ে একটি কিম্ভুত কিমাকার মূর্তি বানাতে পারলেই দাম মেলে ৭০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত। জানালেন এখানকার এক গৃহবধূ শ্যামলী পাল। তিনি বলেন, অনেকেই কালীঠাকুর নিতে এলে দু’টি এরকম মূর্তিও নিয়ে যান। মণ্ডপের দু’দিকে রেখে দেন একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি করার জন্য। বাচ্চারা একটা ভয়মিশ্রিত আনন্দ পায় এসব দেখে। আর এতে খরচ ও ঝামেলা সামান্য বলে আমরাও কিছু টাকা হাতে পাই এসব বিক্রি করে।
দুর্গাপুজোর আগে কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীপাড়ায় শখের আলোকচিত্রীদের যে ভিড় দেখা যায়, কালীপুজোর আগে তেমনটা দেখা যায় না। এই ফাঁকা ফাঁকা কুমোরটুলিতে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল প্রবীণ শিল্পী কালীচরণ পালের সঙ্গে। তিনি বলেন, বাঁকুড়া, বীরভূমে ইতিমধ্যেই চলে গিয়েছে আমার কয়েকটি প্রতিমা। আজ-কালের মধ্যে দূরের জেলায় আরও কয়েকটি প্রতিমা চলে যাবে। এবার কালীপ্রতিমার চাহিদাও বেশ ভালো বলে জানালেন আরেক শিল্পী বিশ্বনাথ পাল। তিনি বলেন, এবার বিশ্বকর্মা ঠাকুরের চাহিদা বেশ কম ছিল। তবে গণেশ এবং কালীর চাহিদা বেশ ভালোই। আর দুর্গাপ্রতিমার চাহিদা তো একইরকম ছিল। কালীপুজো হয়ে গেলে আর সেরকম ব্যস্ততা নেই কুমোরটুলির শিল্পীদের। এরপর জগদ্ধাত্রী পুজো থাকলেও এর জন্য কুমরোটুলিতে সেরকম ব্যস্ততা চোখে পড়ে না। আবার সরস্বতী পুজোর আগে কর্মচঞ্চল হয়ে উঠবে মৃৎশিল্পীপাড়া। তার আগে কিছুটা বিশ্রাম ও তার ফাঁকে সামনের বছরের দুর্গাপ্রতিমার জন্য কাজ এগিয়ে রাখবেন শিল্পীরা।