রাজনীতিক ও পেশাদারদের ব্যস্ততা বাড়বে। বয়স্করা শরীর স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিন। ধনযোগ আছে। ... বিশদ
নবমীর রাতে প্রেমিকাকে বাড়িতে নামিয়ে দেওয়ার পর গাড়ি চালাতে চালাতে দেবাঞ্জন দাসের সঙ্গে ফোনে কথা হয় প্রেমিকার। ওই তরুণী ‘প্রেমিক’ দেবাঞ্জন দাসকে খুনের ঘটনায় জড়িত কি না, তার তদন্ত চালাচ্ছে পুলিস। বৃহস্পতিবার তরুণী, তার প্রাক্তন প্রেমিক প্রিন্স সিং সহ মোট ২০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন মৃতের বাবা অরুণ দাস। তাঁর অভিযোগ, ছেলের খুনের ঘটনায় মেয়েটিও যুক্ত থাকতে পারে। প্রথম থেকে এই ঘটনাকে ‘দুর্ঘটনা’ বলে তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে নিমতা থানার বিরুদ্ধে। ঘটনার পরদিন মৃতের পরিবারের অভিযোগ না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ বারাকপুর পুলিস কমিশনার। গাফিলতি ছিল কি না, তার তদন্তও হবে বলে কমিশনার জানিয়েছেন।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, নবমীর রাতে সল্টলেক সেক্টর ফাইভের একটি নাইটক্লাবে বান্ধবীকে নিয়ে গিয়েছিলেন দেবাঞ্জন। সেখান থেকে নিজে গাড়ি চালিয়ে বিরাটি সর্দারপাড়ায় বান্ধবীকে রাত ২টো ৮ মিনিটে নামিয়ে দেন। মোবাইলের কল রেকর্ড থেকে জানা গিয়েছে, ২টো ১৬ মিনিটে তরুণীর সঙ্গে কথা হয় দেবাঞ্জনের। রাত ২টো ২১ মিনিট পর্যন্ত দেবাঞ্জনের ফোন অ্যাক্টিভ ছিল। তারপরেই ‘গাড়ি দুর্ঘটনাটি’ বিরাটি ব্রিজের কাছে ঘটে। ঘটনার পরদিন অর্থাৎ দশমীর দিনই খুনের অভিযোগ করতে গিয়েছিলেন দেবাঞ্জন দাসের বাবা অরুণবাবু। কারণ গাড়ির ব্রেক প্যাডেলের কাছে একটি ভাঙা বুলেট পাওয়া গিয়েছিল। গাড়ির চালকের আসনে বসেছিলেন দেবাঞ্জন, দুর্ঘটনা হলে এয়ার ব্যাগ খুলে যেত। কিন্তু, এক্ষেত্রে এয়ার ব্যাগ খোলেনি। এসব খুঁটিনাটি দেখার পর মৃতের বাবার সন্দেহ হয়ছিল, ছেলেকে খুন করা হয়েছে। অভিযোগ, দশমীর দিন নিমতা থানায় খুনের দায়ের করতে গেলে দেবাঞ্জনের বাবাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। হয়রানির শিকার হতে হয় তাঁকে।
সূত্রে জানা গিয়েছে, সাধারণ নিয়মানুসারে যে কোনও ঘটনায় মৃত্যুতে হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসকরা পুলিসকে একটি প্রাথমিক মৌখিক রিপোর্ট দেন। এই রিপোর্ট পেয়ে পুলিস ঘটনার তদন্তে নামে। এখানে তাও করা হয়নি। অভিযোগ, তরুণীর প্রাক্তন প্রেমিক প্রিন্স সিংয়ের বাবা পেশায় প্রোমোটার। তিনি প্রভাবশালী হওয়ায় খুনের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলেছিল বলেও অভিযোগ। পরিবারের অভিযোগ, পুলিস প্রথমে পুরো ঘটনা ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল। খুনের ঘটনার তদন্তে নামেনি পুলিস।
বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পুলিসের হাতে আসে। তাতে উল্লেখ রয়েছে, দেহে দু’টো বুলেটের ক্ষত রয়েছে। এরপরেই পুলিস স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা রুজু করেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধায় দেবাঞ্জনের বাবা নিমতা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তাতে ওই তরুণী, তার প্রাক্তন প্রেমিক প্রিন্স রায় সহ ১৫ জনের নাম রয়েছে। আরও পাঁচজন যুক্ত থাকতে পারে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ রয়েছে। দেবাঞ্জনের বাবা অরুণ দাস বলেন, ছেলের সঙ্গে একটি মেয়ের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। সেও জড়িত এই খুনে। প্রিন্স, তার বন্ধুরা মিলেই ছেলেকে খুন করেছে। পুলিস প্রথমে অভিযোগ নেয়নি। আদালতে মামলা করার কথা ভেবেছিলাম। পুলিস পুরো ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। এখন ঘটনাটি নিয়ে নাড়াচাড়া হওয়ায় পুলিস নিজেই ডেকে পাঠিয়েছে আমাদের।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, বিরাটি সর্দারপাড়ার বাসিন্দা ওই তরুণীকে আটক করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এদিন ঘটনার তদন্তে নামেন বারাকপুর পুলিস কমিশনারেটের সিপি মনোজ বর্মা, ডিসি (জোন-২) আনন্দ রায় সহ উচ্চপদস্থ পুলিস কর্তারা। তাঁরা গাড়িটি সরজমিনে খতিয়ে দেখেন। থানায় উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠকও হয়। পুলিস কমিশনার বলেন, মৃতের পরিবারের অভিযোগ কেন নেওয়া হয়নি, তার তদন্ত চলছে।